বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেন কে ? – সংক্ষিপ্তভাবে উত্তর দিলে বলা যায়, বিদ্যুৎ কোনো একক ব্যক্তির আবিষ্কার নয়, বরং এটি শত শত বছরের গবেষণার ফল।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক থেলিস অফ মিলেটাস থেকে শুরু করে বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, আলেসান্ড্রো ভোল্টা, মাইকেল ফ্যারাডে, টমাস এডিসন এবং নিকোলা টেসলা – একাধিক বিজ্ঞানীর নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সম্পর্কে মানুষের ধারণা গড়ে উঠেছে।
এটি বিজ্ঞানের এমন একটি আবিষ্কার যা মানবসভ্যতার প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে – যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিল্প, প্রযুক্তি ও দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
এই প্রবন্ধে আমরা বিদ্যুতের ইতিহাস, এর আবিষ্কারের পিছনে থাকা বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং আধুনিক বিদ্যুৎ প্রযুক্তির বিকাশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রাচীন যুগে বিদ্যুতের প্রথম পর্যবেক্ষণ
বিদ্যুৎ সম্পর্কে মানুষের প্রথম ধারণা প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আসে। প্রাচীন যুগে মানুষ বজ্রপাত, বিদ্যুতায়িত মাছের শক এবং অ্যাম্বার (অ্যানবার) পাথরের চার্জ ধারণের বৈশিষ্ট্য দেখে বিদ্যুৎ সম্পর্কে ধারণা পায়।
গ্রিক দার্শনিক থেলিস অফ মিলেটাস (৬০০ খ্রিস্টপূর্ব)
থেলিস অফ মিলেটাস ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি (স্থির বিদ্যুৎ) সম্পর্কে গবেষণা করেন।
- তিনি লক্ষ্য করেন, যদি অ্যাম্বার পাথর (Amber) পশমের সঙ্গে ঘষা হয়, তাহলে এটি হালকা বস্তু যেমন শুকনো পাতা ও ধুলো আকর্ষণ করতে পারে।
- তিনি প্রথম অনুমান করেন যে এই ঘটনা অদৃশ্য শক্তির কারণে ঘটে, যা বিদ্যুতের প্রথম দৃষ্টান্ত ছিল।
- যদিও এটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ছিল, তবে এটি ভবিষ্যতে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করে।
প্রাচীন মিশর ও ভারতীয় সভ্যতায় বিদ্যুতের ধারণা
- মিশরের কিছু চিত্রলিপি ও ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীতে বজ্রপাতকে দেবতাদের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- কিছু গবেষক মনে করেন, “ব্যাগদাদ ব্যাটারি” নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিদ্যুতের প্রাথমিক ব্যবহার নির্দেশ করে, যদিও এটি বিতর্কিত।
১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা
১৬০০ সালের পর বিজ্ঞানীরা বিদ্যুতের প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু করেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন তত্ত্ব প্রদান করেন।
উইলিয়াম গিলবার্ট – “ইলেকট্রিসিটি” শব্দের জন্মদাতা
- উইলিয়াম গিলবার্ট (William Gilbert) ছিলেন রানী এলিজাবেথের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী, যিনি ১৬০০ সালে “De Magnete” নামে একটি বিখ্যাত বই লেখেন।
- তিনিই প্রথম “Electricus” শব্দটি ব্যবহার করেন, যা পরে “Electricity” (বিদ্যুৎ) শব্দের উৎপত্তি হয়।
- তিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে শুধু অ্যাম্বার নয়, বরং অন্যান্য পদার্থও (যেমন গন্ধক ও কাঁচ) বিদ্যুতায়িত হতে পারে।
অটো ভন গেরিকে – প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদক মেশিনের আবিষ্কার
- ১৬৬০ সালে অটো ভন গেরিকে (Otto von Guericke) প্রথম Electrostatic Generator তৈরি করেন, যা ঘর্ষণ দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল।
- এটি বিদ্যুতের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎপাদক হিসেবে পরিচিত এবং ইলেকট্রিসিটির গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ছিল।
স্টিফেন গ্রে – বিদ্যুতের পরিবাহিতা (Conductivity) আবিষ্কার
- ১৭২৯ সালে স্টিফেন গ্রে (Stephen Gray) দেখান যে বিদ্যুৎ কিছু পদার্থের মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে (পরিবাহী), আবার কিছু পদার্থ এটি প্রতিরোধ করে (অপরিবাহী)।
- এটি বিদ্যুতের পরিবাহিতা এবং ইলেকট্রিক সার্কিট তৈরির ভিত্তি স্থাপন করে।
বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন ও তার বিখ্যাত ঘুড়ি পরীক্ষা
“বজ্রপাত কি বিদ্যুৎ?” – বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের পরীক্ষা
- ১৭৫২ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন (Benjamin Franklin) প্রমাণ করেন যে বজ্রপাত আসলে বৈদ্যুতিক চার্জ।
- তিনি একদিন ঝড়ের মধ্যে একটি ঘুড়িতে ধাতব চাবি সংযুক্ত করে আকাশে উড়ান।
- যখন বজ্রপাত হয়, তখন চাবিতে বৈদ্যুতিক চার্জ অনুভূত হয়, যা তিনি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করেন।
- এই পরীক্ষাটি বিপজ্জনক হলেও এটি বিদ্যুতের প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ছিল।
বজ্রনিরোধক দণ্ড (Lightning Rod) আবিষ্কার
- ফ্র্যাঙ্কলিনের গবেষণার মাধ্যমে তিনি Lightning Rod (বজ্রনিরোধক দণ্ড) আবিষ্কার করেন, যা ভবন ও স্থাপনাগুলোকে বজ্রপাতের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
লুইজি গ্যালভানি ও অ্যালেসান্ড্রো ভোল্টার যুগান্তকারী গবেষণা
লুইজি গ্যালভানি (Luigi Galvani) – প্রাণীদেহে বিদ্যুতের অস্তিত্ব
১৭৮০ সালে ইতালির চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী লুইজি গ্যালভানি ব্যাঙের পায়ের পেশিতে বিদ্যুতের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন।
- তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, ধাতব তার দিয়ে সংযোগ দিলে ব্যাঙের মৃত পা নড়াচড়া করে, যা পরবর্তীতে “Bioelectricity” নামে পরিচিত হয়।
- তিনি ধারণা করেন যে প্রাণীদেহে “জীববিদ্যুৎ” (Animal Electricity) রয়েছে, যা পেশিগুলোর সঞ্চালনে ভূমিকা রাখে।
যদিও গ্যালভানির এই ধারণাটি আংশিক ভুল ছিল, তবে তার গবেষণাই ব্যাটারির আবিষ্কারের পথ তৈরি করে।
অ্যালেসান্ড্রো ভোল্টা (Alessandro Volta) – প্রথম ব্যাটারির আবিষ্কার
লুইজি গ্যালভানির তত্ত্বের ভিত্তিতে ইতালিয়ান বিজ্ঞানী অ্যালেসান্ড্রো ভোল্টা বিদ্যুতের আরও গভীর গবেষণা চালান।
- ১৮০০ সালে তিনি “ভোল্টায়িক পাইল” (Voltaic Pile) নামে বিশ্বের প্রথম ব্যাটারি আবিষ্কার করেন।
- তিনি দেখান যে দুই ধাতব পাত (তামা ও দস্তা) এবং লবণাক্ত দ্রবণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।
- তার গবেষণার সম্মানে বিদ্যুতের বিভব (Voltage) একক তার নামেই রাখা হয় – “ভোল্ট (Volt)”।
ভোল্টার ব্যাটারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রথম স্থায়ী উৎস, যা পরবর্তী সময়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
মাইকেল ফ্যারাডে ও বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় আবিষ্কার
মাইকেল ফ্যারাডে (Michael Faraday) – বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভিত্তি স্থাপন
বিদ্যুৎ ও চৌম্বকত্বের অন্যতম প্রধান গবেষক ছিলেন মাইকেল ফ্যারাডে ।
- ১৮২১ সালে তিনি ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম (Electromagnetism) আবিষ্কার করেন, যা বিদ্যুতের সাহায্যে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
- ১৮৩১ সালে “Electromagnetic Induction” আবিষ্কার করেন, যা বৈদ্যুতিক জেনারেটর ও মোটরের ভিত্তি গড়ে তোলে।
- তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (Power Plant) তৈরি করা হয়।
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইনডাকশন কী?
ফ্যারাডে দেখান যে কোনো তারকে চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে নাড়াচাড়া করলে এতে বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
- এই গবেষণার ফলে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের বাস্তব পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়।
- এটি আজকের জেনারেটর, মোটর, ট্রান্সফরমার এবং পাওয়ার প্ল্যান্টের মূল ভিত্তি।
ফ্যারাডের গবেষণার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হয়, যা সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
টমাস এডিসন ও নিকোলা টেসলা: বিদ্যুতের ব্যবহারিক বিপ্লব
১৮৭০-এর দশকে বিদ্যুৎব্যবস্থার বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়, এবং এর পেছনে টমাস এডিসন ও নিকোলা টেসলার অবদান ছিল অগ্রগণ্য।
টমাস এডিসন (Thomas Edison) – বৈদ্যুতিক বাল্ব ও DC বিদ্যুৎ
টমাস এডিসন বিদ্যুৎকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
- ১৮৭৯ সালে সরাসরি প্রবাহ (Direct Current – DC) ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরি করেন।
- নিউ ইয়র্ক শহরে প্রথম DC পাওয়ার গ্রিড চালু করেন, যা বিদ্যুতের বাণিজ্যিক ব্যবহারের সূচনা করে।
- এডিসন প্রচার করেন যে DC বিদ্যুৎ নিরাপদ এবং কার্যকরী।
তবে DC বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল – এটি দূরত্বে সঞ্চালন করা সম্ভব ছিল না।
নিকোলা টেসলা (Nikola Tesla) – পরিবর্তিত প্রবাহ (AC) বিদ্যুৎ
টমাস এডিসনের পর নিকোলা টেসলা বিদ্যুতের ব্যবহার আরও উন্নত করেন।
- তিনি পরিবর্তিত প্রবাহ (Alternating Current – AC) বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন, যা DC-এর তুলনায় বেশি কার্যকর।
- AC বিদ্যুৎ দূরবর্তী স্থানে সহজে ও কম খরচে সঞ্চালন করা যায়।
- ১৮৯৩ সালে টেসলার AC বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে অফিসিয়ালভাবে গ্রহণ করা হয় এবং এটি আধুনিক বিদ্যুৎ বিতরণের ভিত্তি তৈরি করে।
“AC বনাম DC যুদ্ধ” – বিদ্যুতের দুই প্রবাহের প্রতিযোগিতা
১৮৮০-৯০-এর দশকে টমাস এডিসন (DC) ও নিকোলা টেসলা (AC)-এর মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
- এডিসন DC বিদ্যুৎ প্রচার করছিলেন, যা নিরাপদ কিন্তু কার্যকর নয়।
- টেসলা ও জর্জ ওয়েস্টিংহাউস AC বিদ্যুৎ প্রচার করেন, যা দূরবর্তী স্থানে সহজে বিতরণ করা যায়।
- অবশেষে AC বিদ্যুৎ ব্যবস্থা জয়ী হয়, যা আজও বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ভিত্তি।
আজকের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা: AC + DC একসাথে
বর্তমানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় AC ও DC উভয়ই ব্যবহৃত হয়:
- AC বিদ্যুৎ – বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বাড়ি ও শিল্পকারখানায় সঞ্চালনের জন্য
- DC বিদ্যুৎ – ব্যাটারি, মোবাইল, কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহারের জন্য
আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ প্রযুক্তির উন্নয়ন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহারের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তি, ইলেকট্রিক গাড়ি, স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি ও ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন উপায়গুলো আধুনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতির বিবর্তন
বিদ্যুতের প্রাথমিক উৎপাদন ছিল ব্যাটারি ও সরাসরি প্রবাহ (DC) বিদ্যুৎ, যা ছোটখাট কাজের জন্য উপযুক্ত ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা আরও কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার (Hydroelectric Power) – জলবিদ্যুৎ
- ১৯০০-এর দশকে প্রথমবারের মতো বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হয়।
- এটি নদীর স্রোতের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
- বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পরমাণু বিদ্যুৎ (Nuclear Power) – শক্তিশালী বিদ্যুৎ উৎপাদন
- ১৯৫০-এর দশকে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়, যা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
- এটি বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, কিন্তু এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সৌর ও বায়ুশক্তি (Solar & Wind Energy) – নবায়নযোগ্য শক্তি
- সৌরশক্তি (Solar Energy) – সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এটি এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
- বায়ুশক্তি (Wind Energy) – বায়ুর গতিবেগ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী।
বিদ্যুৎ কীভাবে আধুনিক সভ্যতা পরিবর্তন করেছে?
বিদ্যুৎ আবিষ্কার মানবসভ্যতার প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনাই করা যায় না।
শিল্প ও প্রযুক্তিতে বিদ্যুতের ভূমিকা
- শিল্প বিপ্লবের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বিভিন্ন ধরনের কারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তোলে।
- কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিদ্যুৎ নির্ভর প্রযুক্তির অন্যতম উদাহরণ।
- গবেষণাগারে অত্যাধুনিক মেশিন ও রোবট প্রযুক্তির ব্যবহার বিদ্যুৎ ছাড়া সম্ভব নয়।
চিকিৎসা খাতে বিদ্যুতের গুরুত্ব
- হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, এমআরআই স্ক্যান, এক্স-রে মেশিন বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল।
- টেলিমেডিসিন ও অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যুৎ ছাড়া সম্ভব নয়।
যোগাযোগ ও বিনোদন
- বিদ্যুৎ ছাড়া মোবাইল, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট কাজ করবে না।
- আজকের স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বিদ্যুৎ ছাড়া অকল্পনীয়।
বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন কেমন হত?
বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক সভ্যতা স্থবির হয়ে পড়ত। বিদ্যুৎ না থাকলে কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হত?
- কলকারখানা ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেত।
- চিকিৎসাক্ষেত্রে মারাত্মক সংকট তৈরি হত।
- ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ত।
- খাদ্য সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ত।
- মানুষকে পুরনো পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হত, যা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য।
বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ: নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এমন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি তৈরি করছেন যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।
স্মার্ট গ্রিড (Smart Grid) প্রযুক্তি
- এটি অটোমেটেড বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা, যা বিদ্যুৎ অপচয় কমিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
- স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করছে।
ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) – ভবিষ্যতের পরিবহন
- জ্বালানি-চালিত গাড়ির পরিবর্তে ইলেকট্রিক গাড়ি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
- ইলেকট্রিক গাড়ি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী।
ন্যানো প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিদ্যুৎ উৎপাদনকে আরও উন্নত করবে
- ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও কার্যকর করা হবে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে আরও স্মার্ট ও দক্ষ করে তুলবে।
আরও পড়ুনঃ ট্রানজিস্টর কি ? প্রকারভেদ, কাজ এবং ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
উপসংহার
বিদ্যুতের আবিষ্কার কোনো এক ব্যক্তির একক অবদান নয়, বরং এটি শত শত বছরের গবেষণা ও আবিষ্কারের ফল।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক থেলিস অফ মিলেটাস স্ট্যাটিক বিদ্যুতের ধারণা দেন।
বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বজ্রপাত ও বিদ্যুতের সম্পর্ক নির্ণয় করেন।
অ্যালেসান্ড্রো ভোল্টা ব্যাটারি আবিষ্কার করেন, যা বিদ্যুতের ধারাবাহিক উৎস তৈরি করে।
মাইকেল ফ্যারাডে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইনডাকশন আবিষ্কার করেন, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভিত্তি।
টমাস এডিসন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেন এবং DC বিদ্যুৎ বিতরণ করেন।
নিকোলা টেসলা AC বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করেন, যা বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রধান পদ্ধতি।
বর্তমানে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পদ্ধতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি আমাদের ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হতে চলেছে।
👉 বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক সভ্যতা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ আমাদের জীবনকে সহজ ও উন্নত করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেন কে: যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচে মন্তব্য করুন। পোস্টটি যদি তথ্যবহুল মনে হয়, তবে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!