বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ: প্রতিরোধ ও চিকিৎসার উপায়

বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ, সাধারণত স্বাস্থ্যবিধি ও সঠিক যত্নের অভাবে হয়। কৃমির সংক্রমণ শুধু শিশুদেরই নয়, বড়দেরও হতে পারে।

যদিও শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণ বেশি দেখা যায়, বড়রাও সংক্রমণের ঝুঁকির বাইরে নয়। কৃমির সংক্রমণ সাধারণত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং তারপর অন্ত্র বা পেটের বিভিন্ন অংশে বসবাস করতে শুরু করে। বড়দের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের মূল কারণ হল খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখা।

কৃমি শরীরে প্রবেশ করার পর একবার সংক্রমিত হলে এটি বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পেট ব্যথা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। তাই কৃমি হওয়ার কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।


বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়ার প্রধান কারণগুলো

অপরিষ্কার খাবার ও পানি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যবিধির অভাব বড়দের মধ্যে ঘন ঘন কৃমি সংক্রমণের প্রধান কারণ।

বড়দের মধ্যে কৃমির সংক্রমণের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো আলোচনা করা হচ্ছে:

  • অপরিষ্কার খাবার ও পানি:
    অপরিষ্কার খাবার এবং পানি কৃমির ডিম বা লার্ভার মাধ্যমে সংক্রমণের প্রধান উৎস হতে পারে। বাংলাদেশে অনেক সময় পানির সঠিক পরিশোধন না করা হয়, যা কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে রাস্তার খাবার, খোলা পানি এবং সঠিকভাবে না ধোয়া সবজি বা ফলের মাধ্যমে কৃমি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • স্বাস্থ্যবিধির অভাব:
    স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা না করলে, যেমন খাবার আগে হাত না ধোয়া, অপরিষ্কার হাত মুখে লাগানো বা ময়লা পরিবেশে বসবাস করা কৃমির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। বড়রা প্রায়শই তাড়াহুড়ো করে খাবার খান বা যথাযথ হাত ধোয়ার অভ্যাস মানেন না, যা কৃমির সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এমনকি সাধারণ দৈনন্দিন কাজের পর যেমন বাজার করা, টাকা ধরা বা বাইরে থেকে এসে হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া, কৃমির ডিম বা লার্ভা হাতে থাকতে পারে যা খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
  • পরিবেশগত দূষণ:
    পরিবেশের মাটি, বিশেষত যেখানে মল-মূত্র মিশে থাকে, সেখানে কৃমির ডিম থাকতে পারে। খালি পায়ে হাঁটা বা মাটি দিয়ে খাওয়ার কোনো উপাদান পরিষ্কার না করা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় অপরিষ্কার ও অপরিশোধিত পানি ও পরিবেশে থাকা মানুষের কৃমি সংক্রমণ দেখা যায়।
  • খাদ্যের সঠিক প্রক্রিয়াকরণ না করা:
    আধা-পাকা বা কাঁচা মাংস বা মাছ খাওয়া কৃমির সংক্রমণের একটি বড় কারণ। ফিতা কৃমি (tapeworm) সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো সঠিকভাবে রান্না না করা গরুর মাংস বা শূকরের মাংস খাওয়া। এর ফলে কৃমি বড়দের শরীরে প্রবেশ করে এবং অন্ত্রে বসবাস করতে শুরু করে।
  • পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানো:
    অনেক সময় পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে কৃমি সংক্রমণ থাকলে, অন্য সদস্যদের মধ্যেও এটি ছড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, একই টয়লেট ব্যবহার করা, হাতের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো হতে পারে।

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি না মানা, অপুষ্টিকর ও অপরিষ্কার খাবার এবং পরিবেশগত দূষণ বড়দের মধ্যে কৃমির সংক্রমণের মূল কারণ। বড়রা প্রায়শই মনে করেন যে কৃমি সংক্রমণ শিশুদের সমস্যা, কিন্তু এই ধারণাটি ভুল। বড়দেরও অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।


কোন কোন প্রকার কৃমি বড়দের মধ্যে বেশি দেখা যায়?

বড়দের মধ্যে সাধারণত গোলকৃমি (Roundworm), ফিতা কৃমি (Tapeworm) এবং হুকওয়ার্ম (Hookworm) বেশি দেখা যায়।

কৃমির বিভিন্ন প্রকার রয়েছে এবং বড়দের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের কৃমি সংক্রমণ হতে পারে। নিচে বড়দের মধ্যে বেশি দেখা যায় এমন কিছু কৃমির প্রকার উল্লেখ করা হলো:

  • গোলকৃমি (Roundworm):
    এই কৃমি সাধারণত খারাপ স্বাস্থ্যবিধি ও অপরিষ্কার খাদ্য বা পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। গোলকৃমি পেটে বসবাস করে এবং পুষ্টি শোষণ করে, যা দুর্বলতা, পেট ফোলা এবং ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
  • ফিতা কৃমি (Tapeworm):
    সঠিকভাবে রান্না না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ফিতা কৃমির সংক্রমণ হয়। এটি অন্ত্রের ভেতর লম্বা আকারে বসবাস করে এবং পুষ্টি শোষণ করে। ফিতা কৃমির সংক্রমণ হলে পেটে ব্যথা, বমি এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব হতে পারে।
  • হুকওয়ার্ম (Hookworm):
    এই কৃমি মাটির মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং খালি পায়ে হাঁটার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। হুকওয়ার্ম রক্ত শোষণ করে এবং শরীরে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে দুর্বলতা ও অবসাদ তৈরি করে।

এই কৃমিগুলো বড়দের শরীরে বিভিন্ন উপায়ে সংক্রমিত হতে পারে এবং প্রতিটি কৃমির নিজস্ব প্রভাব রয়েছে। প্রতিটি কৃমির প্রকার অনুযায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

ঘন ঘন কৃমি সংক্রমণের লক্ষণগুলো কী?

ঘন ঘন কৃমি সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে পেট ব্যথা, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া এবং খাদ্যে অরুচি অন্যতম।

বড়দের মধ্যে কৃমির সংক্রমণ হলে অনেক সময় লক্ষণগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। তবে, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে যা ঘন ঘন কৃমি সংক্রমণের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী কৃমি সংক্রমণের ফলে দেখা দেয়:

  • পেট ব্যথা ও বদহজম:
    কৃমি অন্ত্রের ভেতরে বসবাস করে এবং শরীরের পুষ্টি শোষণ করে, যার ফলে পেটের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। কৃমির কারণে পেট ব্যথা, বদহজম, গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যাগুলো ঘন ঘন হতে পারে।
  • খাদ্যে অরুচি:
    কৃমি সংক্রমণের ফলে অনেকেরই খাবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। খাবারের প্রতি অরুচি হওয়া কৃমির একটি সাধারণ লক্ষণ, যা বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা তৈরি করতে পারে।
  • ওজন কমে যাওয়া:
    কৃমি শরীরের পুষ্টি শোষণ করে, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। যদি কাউকে দেখা যায় ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে, তবে এটি কৃমির লক্ষণ হতে পারে।
  • চুলকানি ও ত্বকের সমস্যা:
    কৃমি সংক্রমণের ফলে অনেকের ত্বকে চুলকানি বা র‍্যাশের মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলা তীব্র চুলকানি কৃমির সংক্রমণের একটি প্রধান লক্ষণ।
  • রক্তশূন্যতা ও অবসাদ:
    হুকওয়ার্মের মতো কৃমি সরাসরি রক্ত শোষণ করে, যা শরীরে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে শরীর দুর্বল ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে আয়রনের ঘাটতির কারণে কৃমি সংক্রমণের শিকার ব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদী অবসাদে ভোগেন।

বড়দের কৃমি হওয়ার স্বাস্থ্যগত প্রভাব

কৃমির সংক্রমণ বড়দের শরীরে পুষ্টিহীনতা সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে রক্তশূন্যতা ও ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতার কারণ হতে পারে।

কৃমি শুধু অন্ত্রের ক্ষতি করে না, এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও প্রভাব ফেলে। বড়দের মধ্যে ঘন ঘন কৃমি সংক্রমণ হলে এর অনেকগুলো স্বাস্থ্যগত প্রভাব দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • পুষ্টিহীনতা:
    কৃমি শরীরের পুষ্টি শোষণ করে, যার ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি দেখা দেয়। বিশেষত আয়রন ও প্রোটিনের ঘাটতি বড় ধরনের পুষ্টিহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • রক্তশূন্যতা:
    বিশেষত হুকওয়ার্ম সংক্রমণে রক্তশূন্যতা হয়। কৃমি রক্ত শোষণ করে, যার ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের ফলে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া:
    কৃমির সংক্রমণের ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, যা অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কৃমির কারণে দুর্বল হওয়া শরীর সহজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার শিকার হতে পারে।
  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি:
    কৃমির সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরে দুর্বলতা ও অবসাদ দেখা দেয়। এর ফলে দৈনন্দিন কাজে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা হ্রাস পায়, যা কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে।
  • মানসিক সমস্যা:
    দীর্ঘমেয়াদী কৃমি সংক্রমণ মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং অবসাদের কারণ হতে পারে। শরীরে পুষ্টির অভাব এবং ক্রমাগত শারীরিক দুর্বলতা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।

এই প্রভাবগুলো শুধু শরীরের উপরই নয়, মানসিক ও দৈনন্দিন জীবনের উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই কৃমি সংক্রমণকে অবহেলা করা উচিত নয় এবং দ্রুত প্রতিরোধ ও চিকিৎসার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়

স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা, সঠিকভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া এবং নিরাপদ পানি পান করা কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায়।

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সহজ। বড়দের মধ্যে কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিচে দেওয়া হলো:

  • নিয়মিত হাত ধোয়া:
    খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহার করার পর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। এটি কৃমির ডিমের হাত থেকে মুখে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • খাবার ও পানি পরিষ্কার রাখা:
    খাওয়ার আগে খাবারগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। কাঁচা শাকসবজি বা ফল ভালোভাবে না ধুলে কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এছাড়া, নিরাপদ এবং বিশুদ্ধ পানি পান করা কৃমি সংক্রমণ রোধের অন্যতম প্রধান উপায়।
  • সঠিকভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া:
    বিশেষত মাংস এবং মাছ ভালোভাবে রান্না করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা বা আধা-পাকা খাবারে কৃমি থাকার ঝুঁকি বেশি থাকে, যা সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  • পরিবেশ পরিষ্কার রাখা:
    পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা ও পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখা উচিত। ঘরের চারপাশ পরিষ্কার রাখা এবং বাইরে ময়লা বা দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
  • পায়ে জুতা পরা:
    বাইরে খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ মাটির মাধ্যমে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষত হুকওয়ার্ম সংক্রমণ প্রতিরোধে মাটি থেকে সংক্রমণ হওয়া এড়াতে জুতা পরা উচিত।

কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড়দের ক্ষেত্রে এই অভ্যাসগুলো কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।

বড়দের কৃমি চিকিৎসার সহজলভ্য উপায়

ডিওয়ার্মিং ওষুধ বড়দের কৃমি সংক্রমণ চিকিৎসায় অন্যতম কার্যকর উপায়, যা সহজেই ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।

কৃমি সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সহজলভ্য রয়েছে। বড়দের মধ্যে ডিওয়ার্মিং বা কৃমিনাশক ওষুধ গ্রহণ করা প্রায়ই সংক্রমণ দূর করতে কার্যকর হয়। সাধারণত নিম্নোক্ত ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয়:

  • Albendazole এবং Mebendazole:
    এই দুইটি ওষুধই কৃমি ধ্বংস করতে এবং সংক্রমণ দূর করতে সহায়ক। এগুলো একক ডোজ হিসেবে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
  • Ivermectin:
    এটি বিশেষ ধরনের কৃমি সংক্রমণ, যেমন ফাইলেরিয়া বা হুকওয়ার্মের জন্য কার্যকরী। তবে, এই ওষুধটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত।
  • ডিওয়ার্মিং কর্মসূচি:
    বাংলাদেশে সরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে ডিওয়ার্মিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়, যেখানে প্রাপ্তবয়স্করা সহজেই কৃমিনাশক ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।

নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করানো হলে কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। তবে, ঘন ঘন সংক্রমণ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।


প্রাকৃতিক উপায়ে কৃমি প্রতিরোধ

কাঁচা পেঁপে, রসুন, কাঁচা হলুদ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান কৃমি প্রতিরোধে কার্যকর।

প্রাকৃতিক উপায়েও কৃমি প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যেগুলো কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক প্রতিরোধ উপায় দেওয়া হলো:

  • রসুন:
    রসুনে অ্যান্টিপ্যারাসিটিক গুণ রয়েছে, যা কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
  • কাঁচা পেঁপে:
    পেঁপের বীজে কৃমি ধ্বংসকারী উপাদান থাকে, যা কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। পেঁপের বীজ পেস্ট করে খাওয়া বা পেঁপের জুস গ্রহণ করা ভালো ফলাফল দিতে পারে।
  • হলুদ:
    কাঁচা হলুদে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিপ্যারাসিটিক গুণ রয়েছে। এটি রক্ত পরিশোধন করতে এবং কৃমির সংক্রমণ দূর করতে কার্যকর।
  • মেথির বীজ:
    মেথির বীজ পেটের কৃমি দূর করতে এবং হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। মেথির বীজের পানি খেলে কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়।

এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে বড়দের মধ্যে কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে, ঘন ঘন সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিবারের সদস্যদের যত্ন

পরিবারের সবার জন্য নিয়মিত ডিওয়ার্মিং, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যবিধি কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কৃমি সংক্রমণ অনেক সময় একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই পরিবারের সকল সদস্যের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং কৃমি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কিছু সাধারণ যত্নের উপায় নিচে দেওয়া হলো:

  • নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করানো:
    পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করানো উচিত, বিশেষ করে যারা কৃমির সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
  • শিশুদের স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা দেওয়া:
    শিশুদের সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস শেখানো এবং খাবারের আগে হাত ধোয়ার গুরুত্ব বোঝানো উচিত, কারণ তারা কৃমির সংক্রমণে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
  • পরিবারে সবার জন্য পরিষ্কার পরিবেশ নিশ্চিত করা:
    বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, বিশেষত রান্নাঘর ও টয়লেটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
  • সঠিক খাবার ও পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা:
    পরিবারের সবার জন্য নিরাপদ পানি এবং পুষ্টিকর, পরিষ্কার খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।

এই যত্নের উপায়গুলো পরিবারের সব সদস্যকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। পরিবারের মধ্যে একজন সংক্রমিত হলে, অন্যদের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই সবার জন্য সমান যত্ন নেওয়া জরুরি।

আরও জানুনঃ শীতের ত্বকের যত্ন : ত্বক সুস্থ রাখার সঠিক উপায়


উপসংহার: বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়া প্রতিরোধযোগ্য

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা  এবং চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে বড়দের ঘন ঘন কৃমি হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কৃমি সংক্রমণ বড়দের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে, তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিরাপদ খাবার ও পানি গ্রহণ, নিয়মিত ডিওয়ার্মিং এবং প্রাকৃতিক উপায়ে কৃমি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি ঘন ঘন সংক্রমণ হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

নিয়মিত ডিওয়ার্মিং, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং পরিবারের সব সদস্যের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া উচিত। এতে করে বড়দের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top