বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রচণ্ড ঝড়ের সময় ঘটে। এটি মানুষের জন্য একটি গুরুতর বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তবে সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করলে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। পৃথিবীতে বছরে প্রায় ১৬০ কোটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে, যা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন করে তোলে। তাই বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়, বজ্রপাতের কারণ, এর সময় নিরাপদ থাকার উপায় এবং বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বজ্রপাত কী এবং কেন হয়?
একটি বৈদ্যুতিক প্রাকৃতিক ঘটনা বজ্রপাত, যা মেঘের মধ্যে এবং মেঘ ও পৃথিবীর মধ্যে বৈদ্যুতিক স্রোতের কারণে ঘটে। বজ্রপাত সাধারণত তীব্র বজ্রগর্জন এবং আলোর বিচ্ছুরণ বা “বজ্র” সৃষ্টি করে। যখন আকাশে মেঘের মধ্যে অনেক বিদ্যুৎ সঞ্চিত হয়ে যায়, তখন এই বিদ্যুৎ মেঘের মধ্যে বা মেঘ ও পৃথিবী বা অন্য মেঘের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়ে বজ্রপাত সৃষ্টি করে।
বজ্রপাতের প্রক্রিয়া
মেঘের ভেতরে অসংখ্য ছোট ছোট জলকণিকা এবং বরফকণা থাকে বজ্রপাতের সময়। এদের মধ্যে বিদ্যুৎ সংগ্রহ হয় এবং একসময় এই শক্তি মেঘের ভিতর এবং বাইরে স্থানান্তরিত হতে থাকে। এর ফলে এক ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জ সৃষ্টি হয়, যা মেঘের মধ্যে এবং পৃথিবীর দিকে প্রবাহিত হয়ে বজ্রপাত ঘটায়। এই শক্তি অনেক তাপ সৃষ্টি করে যা ৩০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা সূর্যের তাপমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি।
বজ্রপাতের প্রভাব
একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বৈদ্যুতিক স্রোত বজ্রপাত । এটি যে কোনো ধাতব বস্তু বা তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, যার ফলে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যেতে পারে এবং মারাত্মকভাবে মানুষকে আঘাত করতে পারে। বজ্রপাতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে এটি অনেক সময় গাছ বা বড় বড় স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে দিতে পারে এবং এসব বস্তু থেকে প্রচণ্ড শক বা তাপ নির্গত হয়ে মানুষের শ্বাসযন্ত্র ও ত্বকে ক্ষতি করতে পারে।
বজ্রপাতের সময় কীভাবে নিরাপদে থাকবেন?
বজ্রপাতের সময় সঠিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি জীবন ও সম্পত্তির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ঝড়ের সময় কি করবেন এবং কী করবেন না, তা জানলে আপনি অনেক বেশি নিরাপদ থাকতে পারবেন। নিচে বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকার কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো।
১. বাড়ির ভিতরে থাকুন
বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হল বাড়ির ভিতর। যদি আপনি ঘরের মধ্যে থাকেন, তাহলে আপনি বজ্রপাতের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তবে বাড়ির ভিতরে থেকেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- সর্বোত্তম অবস্থান: বজ্রপাতের সময়, বাড়ির মধ্যে এমন একটি জায়গায় থাকা উচিত যেখানে কম বা কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নেই। উদাহরণস্বরূপ, বেডরুম বা ভিতরের কক্ষগুলি। বাহিরের দেয়ালের কাছে থাকার থেকে ভেতরের অংশে থাকার চেষ্টা করুন।
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন চার্জার ইত্যাদি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে বজ্রপাতের শক্তি প্রবাহিত হতে পারে, যা মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
- বাড়ির দরজা এবং জানালা বন্ধ রাখুন: বজ্রপাতের সময় জানালা বা দরজা খোলা রাখা বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলো বন্ধ রেখে একেবারে নিরাপদ অবস্থায় থাকুন।
২. বাহিরে থাকলে কী করবেন?
যদি আপনি বাড়ির বাইরে থাকেন, তাহলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঝড়-বজ্রপাতের সময় বাহিরে থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
- উঁচু স্থানে না থাকা: বজ্রপাত সাধারণত উঁচু স্থানে আঘাত করে, যেমন পাহাড়, বিল্ডিং বা মোটা গাছ। তাই যেখানেই থাকুন, উঁচু স্থানে অবস্থান না নেওয়ার চেষ্টা করুন। দ্রুত নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন।
- গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়া: গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া একেবারে বিপজ্জনক। গাছগুলো বজ্রপাতের শক্তি শোষণ করতে পারে, আর গাছের শাখা ভেঙে গিয়ে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- পানির উৎস থেকে দূরে থাকা: পানির উৎস যেমন নদী, সাগর বা হ্রদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। জল সাধারণত বৈদ্যুতিক শক্তি খুব দ্রুত পরিবহন করতে পারে। তাই পানির পাশে থাকলে বজ্রপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
৩. যানবাহনে থাকলে কী করবেন?
যানবাহনে থাকলে, এটি বজ্রপাত থেকে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। তবে এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত।
- গাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন: গাড়ির ধাতব অংশ বজ্রপাতকে শোষণ করতে সক্ষম, তাই গাড়ির জানালা বন্ধ রাখতে হবে। গাড়ির ভিতরে থাকলে আপনি বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
- গাড়ির ধাতব অংশে হাত না দেওয়া: গাড়ির ভিতরে থাকাকালীন গাড়ির ধাতব অংশে হাত বা পা না রাখার চেষ্টা করুন, কারণ বজ্রপাত এসব অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বজ্রপাতের পর কী করবেন?
বজ্রপাতের পর কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি, যাতে নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার এবং আপনার পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষা পেয়েছে।
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরীক্ষা করুন: বজ্রপাতের পর যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার ইত্যাদি পরীক্ষা করুন। যদি এগুলো ঠিকঠাক না থাকে তবে সেগুলি ব্যবহার করবেন না।
- আঘাতপ্রাপ্তদের সাহায্য করুন: যদি কেউ বজ্রপাতের কারণে আহত হয়, তাহলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। আহত ব্যক্তি শক অবস্থা বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হলে, CPR দেওয়ার চেষ্টা করুন এবং দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে দিন।
- স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন: বজ্রপাতের পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন যদি কোনো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারা আপনাকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাবে।
বজ্রপাতের সময় শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
বজ্রপাতের সময়, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকে। তাদের শারীরিক ক্ষমতা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কম হতে পারে, তাই তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১. শিশুদের নিরাপদ স্থানে রাখা:
বজ্রপাতের সময় শিশুদের বাইরে রেখে আসা খুবই বিপজ্জনক। শিশুদের তাদের ঘর বা নিরাপদ স্থান, যেমন ভিতরের কক্ষে রাখা উচিত, যেখানে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং জানালা থেকে দূরে থাকতে পারে। তাদের বয়সের কারণে তারা বুঝতে পারে না বজ্রপাতের ঝুঁকি, তাই অভিভাবকদের তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা উচিত।
- বজ্রপাতের সময় তাদের ব্যস্ত রাখতে খেলাধুলা বা বই পড়ার মতো কাজে নিয়োজিত করুন।
- শিশুদের গাছের নিচে বা উঁচু স্থানে যাওয়া থেকে বিরত রাখুন।
২. বয়স্কদের জন্য বাড়ির ভিতরে নিরাপদ স্থান নির্ধারণ:
বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে, বজ্রপাতের সময় নিরাপদ স্থানে থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বাড়ির ভিতর থাকা উচিত এবং কেবল তাদের কাছের পরিবার সদস্যদের কাছেই রাখা উচিত। বিশেষত যারা শারীরিকভাবে দুর্বল বা চলাফেরায় অক্ষম, তাদের জন্য বাড়ির নিরাপদ স্থানগুলোতে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বয়স্কদের জন্য, আলো বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিন।
- বয়স্কদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী তাদের জন্য জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখুন।
বজ্রপাতের পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি
বজ্রপাতের পূর্বাভাস পাওয়া এবং তার জন্য প্রস্তুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি বজ্রপাতের সময় প্রস্তুত থাকতে পারেন এবং ঝুঁকি কমাতে পারবেন।
১. আবহাওয়া পূর্বাভাসের গুরুত্ব:
আজকাল আবহাওয়া পূর্বাভাস অনেক উন্নত হয়েছে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস প্রায় ২৪-৪৮ ঘণ্টা আগে দেয়া সম্ভব। তাই আবহাওয়া বুলেটিন বা পূর্বাভাস দেখে আপনি ঝড়ের সময় প্রস্তুত থাকতে পারবেন। বজ্রপাতের পূর্বাভাস পাওয়ার পর, অবশ্যই তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
- বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- ঘরের বাইরে কোনো কাজ না করা এবং ঝড়ের সময় সুরক্ষিত স্থানে আশ্রয় নেওয়া উচিত।
২. বজ্রপাতের জন্য প্রস্তুতি:
আপনার বাড়ির ভিতরে বা বাহিরে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার:
- বাড়ির নিরাপত্তা: বজ্রপাতের সময় সঠিক প্রস্তুতি নিতে বাড়ির বিদ্যুৎ এবং পানি সংযোগের সাথে সম্পর্কিত ব্যবস্থা আগে থেকেই প্রস্তুত করুন। বিদ্যুৎ চমকানোর ফলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাড়ির বাইরে থাকলে, নিশ্চিত করুন যে আপনি উঁচু স্থানে বা গাছের নিচে না থাকুন।
- নিরাপদ আশ্রয়: বাইরের কাজের জন্য কোনো অবিলম্বে আশ্রয়স্থল হিসেবে গাড়ি, টানেল বা স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিন। মনে রাখবেন, গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া খুব বিপজ্জনক।
৩. আপনার মোবাইল ফোনের প্রস্তুতি:
মোবাইল ফোন ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত দুর্যোগের সময়। যেহেতু বজ্রপাতের কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে, আপনার মোবাইল ফোনে প্রাথমিক সাহায্য এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য ব্যাটারি ভর্তি থাকতে হবে।
- মোবাইল ফোনে দ্রুত যোগাযোগ: বজ্রপাতের সময় আপনাকে বা অন্যকে সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, তাই মোবাইল ফোনে চার্জ থাকা নিশ্চিত করুন।
- এমার্জেন্সি কন্টাক্ট রাখা: আপনার পরিবারের সদস্য এবং কাছের বন্ধুদের ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন, যাতে জরুরি প্রয়োজন পড়লে তাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারেন।
বজ্রপাতের পরবর্তী করণীয়
বজ্রপাতের পর, অবশ্যই কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ বজ্রপাতের পরে যে বিপদগুলি সৃষ্টি হতে পারে, তা তৎকালীন সময়ে ঠিকমতো মোকাবেলা না করলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
১. বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরীক্ষা করা:
বজ্রপাতের সময়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যেমন টেলিভিশন, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুতরাং, বজ্রপাতের পরে এগুলোর কাজকর্ম পরীক্ষা করা উচিত। অনেক সময় এই যন্ত্রগুলি সার্ভিসিং বা রিপেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে এগুলি নিরাপদ এবং পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
২. আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া:
বজ্রপাতের পর, যদি কোনো ব্যক্তি আহত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। বজ্রপাতের পর, আহত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখুন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করুন। এতে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেক বাড়ে।
- প্রাথমিক চিকিৎসা: যদি একজন ব্যক্তি শক বা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন, তাহলে তাকে CPR দেওয়ার চেষ্টা করুন এবং ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে দিন।
- উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানান।
৩. স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা:
বজ্রপাতের পর যে ক্ষতি বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তা মোকাবেলার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তাদের নির্দেশনা মেনে চলুন এবং যদি আপনার আশেপাশে কোনো বড় বিপদ ঘটে, তবে তাদের অবহিত করুন।
জ্রপাতের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পর্যালোচনা
বজ্রপাতের সময় আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। বজ্রপাতের পূর্বে আপনি যেসব পদক্ষেপ নিতে পারেন, সেগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার জীবন এবং আপনার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।
১. সঠিক সরঞ্জাম এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করা
বজ্রপাতের পূর্বে আপনার বাড়িতে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। যেমন:
- নিরাপদ আশ্রয়: সঠিকভাবে জানালা বন্ধ করা এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি unplugged রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, বাড়ির আশপাশে অতিরিক্ত কোনো ধাতব বস্তু বা সিস্টেম থেকে দূরে থাকতে হবে।
- এমার্জেন্সি কিট: মেডিকেল কিট, মোবাইল ফোন এবং টর্চলাইট প্রস্তুত রাখা জরুরি। আপনি যদি বজ্রপাতের কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগ হারান, তাহলে সেগুলো আপনার জন্য কার্যকর হবে।
- বিকল্প শক্তির উৎস: বাড়িতে অতি জরুরি ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য প্রজেক্টর বা পোর্টেবল পাওয়ার ব্যাঙ্ক রাখতে পারেন।
২. প্রাকৃতিক সংকেতের প্রতি মনোযোগ দিন
কখনো কখনো বজ্রপাতের পূর্বে কিছু প্রাকৃতিক সংকেত দেখা দিতে পারে:
- আকাশে মেঘ জমা হওয়া: বজ্রপাতের পূর্বে আকাশে ভারী মেঘ দেখা যায়। এসময়, আকাশে মেঘের গাড় রঙ এবং দ্রুত গতি দেখা দিলে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
- তীব্র বজ্রগর্জন: যদি বজ্রগর্জন শুনতে পান এবং আকাশে আলোর ঝলকানি দেখেন, তবে ঝড়ের আসন্ন সতর্ক সংকেত হতে পারে।
৩. বজ্রপাতের পর নিরাপত্তা:
বজ্রপাতের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আপনাকে অবশ্যই নিতে হবে:
- বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করুন: বজ্রপাতের পর, আপনার বৈদ্যুতিক সংযোগ ও যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করুন। যদি এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেগুলো প্রতিস্থাপন করুন।
- খাবার ও পানির নিরাপত্তা: বজ্রপাতের পর, খাবার ও পানি সংরক্ষণে সতর্কতা অবলম্বন করুন। খাবারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যদি বৈদ্যুতিক বিপর্যয় ঘটে থাকে।
বজ্রপাতের পরে পুনরুদ্ধার এবং তৎপরতা
বজ্রপাতের পর, সবার মধ্যে সতর্কতা এবং শান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বজ্রপাতের কারণে যদি কোনও বড় ক্ষতি হয় বা কোনো আঘাত ঘটে, তবে দ্রুত এবং সঠিকভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করুন।
১. পুনরুদ্ধারের সময় জরুরি সাহায্য নিশ্চিত করুন
বজ্রপাতের পর আহতদের দ্রুত উদ্ধার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা খুবই জরুরি। তাদের জন্য দ্রুত হাসপাতাল বা জরুরি সেবার ব্যবস্থা করুন।
- প্রাথমিক চিকিৎসা: যদি কেউ বজ্রপাতের ফলে গুরুতর আহত হন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করুন, CPR বা অন্য কোনো জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন: যে এলাকায় বজ্রপাতের কারণে ব্যাপক ক্ষতি বা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
২. স্থানীয় উদ্ধার ও সহায়তা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করুন:
বজ্রপাতের পর বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকতে পারে, তাই স্থানীয় উদ্ধারকারী সংস্থা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার এলাকা পরিদর্শন করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
উপসংহার:
বজ্রপাত একটি বিপজ্জনক প্রাকৃতিক ঘটনা হতে পারে, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এবং পূর্বের প্রস্তুতি নিয়ে আপনি এবং আপনার পরিবার এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন। বজ্রপাতের সময় সঠিক স্থান নির্বাচন, গাছের নিচে না থাকা, নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করা এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকা আপনার জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে। বজ্রপাতের পর, সঠিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন যে, আপনার পরিবারের নিরাপত্তা বজায় আছে।
এছাড়া, বজ্রপাতের জন্য পূর্বাভাস এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে, ঝড়ের সময় প্রস্তুতি নেয়া আপনাকে জীবনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। সঠিক পদক্ষেপ নিলে বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও নিরাপদ থাকা সম্ভব।
বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকার জন্য এই আর্টিকেলটি আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। তাদের সচেতন করুন এবং সুরক্ষিত রাখুন।