শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া : কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী শক্তিশালী দোয়া, আমল ও ইসলামিক নির্দেশনা

mybdhelp.com-শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া
ছবি : MyBdhelp গ্রাফিক্স

শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া : শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের ঈমানকে রক্ষা করে এবং সঠিক পথে পরিচালিত থাকতে সাহায্য করে। ইসলাম অনুযায়ী, শয়তান মানুষের শত্রু এবং তার প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও গোনাহের দিকে টেনে নেওয়া।

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন:
اِنَّ الشَّيۡطٰنَ لَـكُمۡ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوۡهُ عَدُوًّا ؕ اِنَّمَا يَدۡعُوۡا حِزۡبَهٗ لِيَكُوۡنُوۡا مِنۡ اَصۡحٰبِ السَّعِيۡرِؕ‏ 

অর্থঃ “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তার অনুসারীদের ডাকে, যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের সঙ্গী হয়ে যায়। (সূরা ফাতির, আয়াত-৬)

শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার গুরুত্ব কেন?

  • শয়তান আমাদের ঈমান দুর্বল করার চেষ্টা করে।
  • সে মানুষের মনে সন্দেহ ও কুমন্ত্রণা ঢোকানোর চেষ্টা করে।
  • মানুষকে পাপের দিকে আহ্বান করে এবং সৎপথ থেকে সরিয়ে নিতে চায়।
  • শয়তানের ধোঁকায় পড়লে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আমরা কিভাবে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে পারি?
প্রতিদিনের আমল ও দোয়া পড়ে।
কুরআন ও রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে।
আল্লাহর জিকির ও ইবাদত বৃদ্ধি করে।
খারাপ চিন্তা থেকে বিরত থেকে শুদ্ধ চিন্তা চর্চা করা।


শয়তানের অস্তিত্ব ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

শয়তান কে এবং তার সৃষ্টি কিভাবে হয়েছে?

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَاِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰۤٮِٕكَةِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِيۡسَؕ كَانَ مِنَ الۡجِنِّ فَفَسَقَ عَنۡ اَمۡرِ رَبِّهٖؕ اَفَتَـتَّخِذُوۡنَهٗ وَذُرِّيَّتَهٗۤ اَوۡلِيَآءَ مِنۡ دُوۡنِىۡ وَهُمۡ لَـكُمۡ عَدُوٌّ ؕ بِئۡسَ لِلظّٰلِمِيۡنَ بَدَلًا‏ 

“আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে আদমকে সিজদা করতে বললাম, তখন সবাই সিজদা করলো, শুধুমাত্র ইবলিস (শয়তান) তা করলো না। সে জিনদের মধ্য থেকে ছিল এবং সে তার প্রভুর আদেশ লঙ্ঘন করেছিল।” (সূরা কাহফ, আয়াত-৫০)

শয়তানের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • শয়তান ছিল একজন জিন, ফেরেশতা নয়।
  • সে অহংকারবশত আদম (আ.) কে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল।
  • আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করেন এবং সে কেয়ামত পর্যন্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করার অনুমতি পায়।

শয়তানের প্রধান লক্ষ্য কী?

মানুষকে সৎপথ থেকে বিচ্যুত করা
পাপ ও গোনাহের দিকে ধাবিত করা
সন্দেহ ও কুমন্ত্রণা ছড়ানো
নেক আমল ও ইবাদতে বাধা সৃষ্টি করা

কুরআনে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
“শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো।” (সূরা ফাতির: ৬)

শয়তান থেকে বাঁচার উপায়:

  • আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।
  • কুরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করা।
  • রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ মেনে চলা।
  • নফসের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

কুরআন ও হাদিসে শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া

শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কুরআনে অনেক দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন। রাসূল (সা.)-ও অনেক শক্তিশালী দোয়া শিখিয়েছেন, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।

১. আয়াতুল কুরসি : আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে শয়তান থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি রাতে আয়াতুল কুরসি পড়ে, আল্লাহ তাআলা তাকে শয়তান থেকে রক্ষা করেন এবং সেই রাত পর্যন্ত কোনো বিপদ এসে পৌঁছায় না।” (বুখারি, হাদিস নং ২৩১১)

ফজর ও মাগরিবের পর এই আয়াত পড়লে শয়তান ধারে কাছে আসে না।

২. তিন কুল (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস)
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস সম্পর্কে হাদিস: নবী করিম (সা.) এর সম্পর্কে বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকালে তিনটি কুল (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, এবং সূরা নাস) পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে সেদিনের জন্য নিরাপদ রাখবেন। আর যে ব্যক্তি রাতে তিনটি কুল পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে রাতের জন্য নিরাপদ রাখবেন।” (আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৮২)

এ সম্পর্কে আরেকটি হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে তিনটি কুল (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, এবং সূরা নাস) তিনবার পড়বে, সে তার শরীর ও মন থেকে সকল ক্ষতির বিরুদ্ধে নিরাপদ থাকবে, এবং সে আল্লাহর রক্ষা লাভ করবে।” (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৭৫)

সূরা ইখলাস (سورة الإخلاص)

আরবি: قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ٣ وَلَمْ يَكُن لَّهُۥۤۖ كُفُوًا أَحَدٌ ٤

সূরা ফালাক (سورة الفلق)

আরবি: قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ ١ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ ٢ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ٣ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ ٤ وَمِن شَرِّ حَٰسِدٍ إِذَا حَسَدَ ٥

সূরা নাস (سورة الناس)

আরবি: قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ١ مَلِكِ النَّاسِ ٢ إِلَٰهِ النَّاسِ ٣ مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ٤ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ النَّاسِ ٥ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ٦

রাতে ঘুমানোর আগে এই তিনটি সূরা পড়লে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদ থাকা যায়।

৩. শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষার সংক্ষিপ্ত দোয়া:  “أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ”
এর অর্থ: আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।

 ৪. রাসূল (সা.)-এর শেখানো দোয়া:
“اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ”
এই দোয়া টয়লেটে প্রবেশের আগে পড়লে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকা যায়।

এই দোয়াগুলো নিয়মিত পড়লে, শয়তানের ধোঁকা থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।


শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ধোঁকা থেকে বাঁচার কৌশল

শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু এবং তার মূল কাজ হলো মানুষকে সৎপথ থেকে দূরে সরানো। সে বিভিন্ন ধোঁকা ও প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে গুনাহের দিকে টেনে নেয়। তবে কিছু কার্যকর কৌশল অনুসরণ করলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচা সম্ভব।

কিভাবে শয়তানের ধোঁকা চেনা যায়?

সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করা – শয়তান বিশ্বাস ও ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
নেক আমল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা – নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও জিকিরে অলসতা সৃষ্টি করে।
পাপকে আকর্ষণীয় করে তোলা – হারাম জিনিসগুলোকে স্বাভাবিক ও লোভনীয় মনে করিয়ে দেয়।
সৎকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা – দান-সদকা, ইসলামের পথে চলা কঠিন মনে করিয়ে দেয়।

কিভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আত্মরক্ষা করা যায়?

আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা।
প্রতিদিনের জীবনে আল্লাহর জিকির বৃদ্ধি করা।
শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলেই “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম” পড়া।
কুরআন তেলাওয়াত করা, বিশেষ করে আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক, সূরা নাস।
সৎ ও ধার্মিক মানুষের সঙ্গ গ্রহণ করা।
নামাজ ঠিকভাবে আদায় করা, কারণ এটি শয়তানের শক্তি দুর্বল করে।
বিপদ বা সন্দেহ সৃষ্টি হলে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া করা।

রাসূল (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি দিনে ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু’ পড়বে, সে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।” (সহীহ বুখারি, হাদিস নং 6403)


শয়তান থেকে বাঁচার শক্তিশালী আমল

শক্তিশালী আমল যা শয়তানের প্রভাব কমিয়ে দেয়

ফজরের পর ও রাতে ঘুমানোর আগে দোয়া ও জিকির করা।
আয়াতুল কুরসি পড়া, এটি শয়তানের প্রবেশ রোধ করে।
প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলা।
শয়তানের কুমন্ত্রণা এলে সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের আগে বিসমিল্লাহ বলা।

শয়তান থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ কিছু দোয়া ও আমল

১. রাতে ঘুমানোর আগে শয়তান থেকে রক্ষার দোয়া:
নবী করিম (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি রাতে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়া পড়ে, আল্লাহ তাকে শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবেন।” (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৩২৫)

দোয়া: بِسْمِ اللَّٰهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ. اللَّهُمَّ إِنِّي أُسَلِّمُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَاللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা ইনি উসাল্লিমু নাফসি ইলাইকা, ওয়া আল্লাহুম্মা ইনি আউযুবিকা মিনাশ শাইতানির রাজীম।” 

অর্থ: “আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু, পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, আমি আমার আত্মা তোমার কাছে সোপর্দ করলাম, এবং হে আল্লাহ, আমি শয়তান অভিশপ্ত থেকে তোমার শরণাপন্ন হচ্ছি।”

২. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়া:

নবী করিম (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়া পড়ে, আল্লাহ তাআলা তাকে রক্ষা করেন এবং তার জন্য শয়তান থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।” (সহীহ মুসলিম)

আরবি: “بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللَّهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ”

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”

অর্থ: “আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলাম, এবং আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই।”

৩. খারাপ স্বপ্ন দেখে জাগ্রত হলে:
“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।”

৪. নামাজের সময় খুশু-খুজু বজায় রাখার দোয়া:
“রাব্বি আউযুবিকা মিন হামজাতিশ শায়াতীন, ওয়া আউযুবিকা রাব্বি ইয়াহদুরুন।”

কেন এগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

  • নামাজ ও দোয়া শয়তানের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে।
  • আল্লাহর স্মরণ শয়তানের শক্তিকে দুর্বল করে।
  • নিয়মিত আমল করলে শয়তান দুর্বল হয়ে যায়।

কুরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যা শয়তান থেকে রক্ষা করে

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা তোমাকে প্রলুব্ধ করে, তবে আল্লাহর শরণ নাও, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত- ২০০)

১. সূরা আল-বাকারাহ (আয়াত: ২৮৫-২৮৬)

এই আয়াত দুইটি রাতে পড়লে শয়তান সারা রাত কষ্ট দিতে পারে না।

হাদিস: “যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) পড়বে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।” (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)

২. আয়াতুল কুরসি (সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫)

ঘুমানোর আগে পড়লে সারা রাত শয়তান ধারে কাছে আসে না।

৩. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস

এই তিনটি সূরা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়।

৪. সূরা মুমিনুন (আয়াত ৯৭-৯৮)

“হে আমার রব! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে তোমার শরণ চাই।”

এই আয়াতগুলো নিয়মিত পড়লে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


নিত্যদিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া যা শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে

 শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট দোয়া ও আমল করা উচিত। রাসূল (সা.) আমাদের বিভিন্ন সময়ের জন্য আলাদা আলাদা দোয়া শিখিয়েছেন, যা শয়তানের ধোঁকা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।

নামাজের পর পড়ার বিশেষ দোয়া ও জিকির

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি প্রতি নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে, সে কখনো শয়তানের ধোঁকায় পড়বে না।” (মুসলিম)

নামাজের পর পড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া:
“আল্লাহুম্মা আ’ইনী আলা জিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।”

“যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে, আল্লাহ তার জন্য সাহায্য প্রদান করবেন এবং তাকে ভালোভাবে ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণ করার শক্তি দেবেন।” (সহীহ মুসলিম)
“লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি পৃথিবীতে এই কথাগুলি উচ্চারণ করে: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনার মতোই বেশি পরিমাণ হয়।” (জামে তিরমিজি: ৩৪৬০)

খাবার খাওয়ার আগে ও পরে পড়ার দোয়া

রাসূল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি খাবার খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলে, শয়তান তার খাবারে অংশ নিতে পারে না।” (মুসলিম)

খাওয়ার আগে:
“বিসমিল্লাহি ওয়ালা বারাকাতিল্লাহ”

নবী (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি খাবার খাওয়ার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, তার খাবার বরকতময় হয়।” (সহীহ মুসলিম)

খাওয়ার পরে:

“الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ”

“আলহামদুলিল্লাহি-ল্লাজি আত’আমানা ওয়াসকা’ানা ওয়াজ’আলানা মিনাল মুসলিমীন”

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে এই দোয়া পড়ে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২০৪০)

ঘুমানোর আগে ও সকালে উঠার সময়ের দোয়া

ঘুমানোর আগে পড়ার দোয়া:

“بِسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا” “বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমূতু ওয়আহিয়া”

অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনার নামে আমি মরবো এবং জীবিত হবো।”

এই দোয়া নবী (সা.) থেকে বর্ণিত এবং এটি মানুষের ঘুম ও মৃত্যুর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, যাতে আল্লাহর কাছে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

সকালে উঠার সময় পড়ার দোয়া:

“الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ” “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়াইলাইহিননুশূর”

অর্থ: “আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদের মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন এবং তাঁর কাছে ফিরে যাবো।”

হাদিস: নবী (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি রাতে এই দোয়া পড়ে এবং সকালবেলা উঠে, সে আল্লাহর সুরক্ষা পায়।” (সহীহ বুখারি)

ঘর থেকে বের হওয়ার ও প্রবেশ করার দোয়া

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া:
রাসূল (সা.) বলেছেন:
যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’ বলবে, শয়তান তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিজি)

ঘরে প্রবেশের সময়:
“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।”


শিশুদের শয়তান থেকে রক্ষা করার উপায়

শিশুরা সাধারণত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই রাসূল (সা.) শিশুদের সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন।

শিশুদের জন্য বিশেষ দোয়া ও আমল

নবজাতকের জন্য দোয়া:
রাসূল (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.) এর জন্য দোয়া করতেন:

 “أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِن كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِن كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ”

শিশুদের ঘুমানোর আগে:
সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে তাদের গায়ে ফুঁক দিতে হবে।

শিশুর নিরাপত্তার জন্য দোয়া:

 “আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক।”

কেন এগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

  • শিশুদের জিন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • খারাপ স্বপ্ন ও কুমন্ত্রণা দূর করে।
  • আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে রাসূল (সা.)-এর উপদেশ

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের রক্তনালীর মধ্যে প্রবাহিত হয়, তাই তোমরা তাকে আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দূরে সরিয়ে দাও।” (বুখারি)

রাসূল (সা.) কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রতিহত করতেন?

নিয়মিত আল্লাহর জিকির করতেন।
কোনো সন্দেহ সৃষ্টি হলে সাথে সাথে দোয়া করতেন।
আল-কুরআনের নির্দিষ্ট আয়াত পড়তেন।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকভাবে আদায় করতেন।

রাসূল (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা যা আমাদের রক্ষা করবে

 তিনি বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়বে, সারা রাত শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।” (বুখারি)

আরও পড়ুন: রাতে ঘুমানোর আগে আমল : আধ্যাত্মিক শান্তি ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস


উপসংহার:

শয়তান থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ইসলামিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করতে হবে, নিয়মিত দোয়া করতে হবে এবং নেক আমল বাড়াতে হবে। কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার মূল উপায়

সকাল ও সন্ধ্যার দোয়া পড়া।

ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি ও শেষ তিন কুল পড়া।
নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলা।

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার করে পড়বে, সে সমস্ত ক্ষতি ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদ থাকবে।” (তিরমিজি)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা

আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও গুনাহ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত: ৪৫)

নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা

 রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি প্রতিদিন আয়াতুল কুরসি পড়বে, সে সর্বদা শয়তানের নিরাপত্তা পাবে।” (বুখারি)

শয়তানের কুমন্ত্রণা এলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া

“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম” পড়া।
বিপদে পড়লে “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলা।

আল্লাহ বলেন:
“আর যদি শয়তান তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর শরণ নাও।” (সূরা ফুসসিলাত: ৩৬)

 ভালো মানুষের সঙ্গ গ্রহণ করা ও ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করা

 রাসূল (সা.) বলেছেন:
“ভালো বন্ধু হলো সেই ব্যক্তি, যার সঙ্গে সময় কাটালে তোমার ঈমান শক্তিশালী হয়।” (বুখারি)

শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া: যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচে মন্তব্য করুন। পোস্টটি যদি তথ্যবহুল মনে হয়, তবে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top