মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত ? পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

mybdhelp.com-মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত
ছবি: প্রতীকী

মাউন্ট এভারেস্ট হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত, যা নেপাল এবং চীনের (তিব্বত) সীমানার মধ্যে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত। মাউন্ট এভারেস্ট—পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত, যার শিখর ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট)—বিশ্বের পর্বতপ্রেমী, অভিযাত্রী এবং ভ্রমণকারীদের কাছে একটি স্নেহের স্থান। মাউন্ট এভারেস্ট শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি সাহস, স্বপ্ন এবং মানবজাতির অসীম প্রচেষ্টার প্রতীক। এই পর্বতটি আমাদের মনে একটি বিশেষ জায়গা অধিকার করে আছে, যা পৃথিবী থেকে আকাশে পৌঁছানোর অদম্য ইচ্ছার প্রতীক। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত , এর শিখর ও উচ্চতা, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং স্থানীয় জনগণের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা জানবো, কোথায় অবস্থিত এই মহামহিম পর্বত এবং কীভাবে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মাউন্ট এভারেস্ট কী?

এই মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এবং এর শিখর পৃথিবীর সবথেকে উঁচু স্থানে অবস্থিত। এটি হিমালয় পর্বতমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল এবং চীনের তিব্বত অঞ্চলের সীমানায় অবস্থিত।

এই পর্বতটির উচ্চতা হল ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট), যা বিশ্বে কোনও পর্বতের শিখরের চেয়ে উচ্চতর। এর নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলেও, এর স্থানীয় নাম ভিন্ন। নেপালে এটিকে “সাগরমাথা” এবং তিব্বতে এটিকে “ছুমলাংমা” বলা হয়।

মাউন্ট এভারেস্টের শারীরিক বৈশিষ্ট্য:

এভারেস্টের শিখরের উচ্চতা নিয়ে অনেক গবেষণা ও পরিমাপ হয়েছে। ২০২০ সালে চীন ও নেপাল যৌথভাবে পরিমাপ করে এর নতুন উচ্চতা ঘোষণা করে। এত উচ্চতায় দাঁড়িয়ে পৃথিবী থেকে আকাশের দিকে তাকালে, তা যে কতটা বিস্ময়কর অনুভূতি হতে পারে, তা কেবলমাত্র যারা সেখানে উঠেছেন, তারাই জানেন। তবে, এই পর্বতটি শুধু উচ্চতার জন্যই বিখ্যাত নয়, এর গঠন, ভূতত্ত্ব এবং অঞ্চলটি কেমন তা জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।


মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত ?

এই মাউন্ট এভারেস্টের অবস্থান পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূগোলগত স্থানগুলির একটি। এটি হিমালয় পর্বতমালা নামক বিশাল পর্বতশ্রেণীর একটি অংশ, যা এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। মূলত, মাউন্ট এভারেস্ট নেপাল ও চীনের (তিব্বত) সীমানায় অবস্থিত।

মাউন্ট এভারেস্টের অবস্থান—নেপাল এবং তিব্বত:

  • নেপাল: মাউন্ট এভারেস্ট নেপালের সোলুখুম্বু জেলাতে অবস্থিত। এটি নেপালের পূর্বাংশে এবং সাগরমাথা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
  • তিব্বত (চীন): মাউন্ট এভারেস্টের শিখর চীনের তিব্বত অঞ্চলের সাথে সীমানা ভাগাভাগি করে। তিব্বতের নাম দেয়া হয়েছে ছুমলাংমা (Chomolungma), যা তিব্বতি ভাষায় “পৃথিবীর দেবী” অর্থে ব্যবহৃত হয়।

তবে, মাউন্ট এভারেস্টের শিখর ও এর আশপাশের অঞ্চলটি এই দুই দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। সুতরাং, এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক পর্বত নয়, দুটি দেশের সাংস্কৃতিক, ভূগোলিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তও।

হিমালয় পর্বতমালা এবং এর ভূমিকা:

মাউন্ট এভারেস্ট হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে অবস্থান করছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বতশ্রেণী। হিমালয় শব্দটি সংস্কৃত শব্দ “হিম” (হিমশীতল) এবং “আলয়” (গৃহ) থেকে এসেছে, যার অর্থ “হিমশীতল গৃহ”। হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং রহস্যময় পর্বতমালা, যেখানে মাউন্ট এভারেস্টের মত মহাকাব্যিক উচ্চতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে।

এভারেস্টের অবস্থানই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশেষ স্থানগুলির মধ্যে একটি বানিয়ে তুলেছে।


মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য

মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত, যার শিখর ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট) উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছে। ২০২০ সালে, নেপাল ও চীন যৌথভাবে এভারেস্টের উচ্চতা পুনরায় পরিমাপ করার পর এই নতুন পরিমাপটি প্রকাশ করা হয়। এর পূর্ববর্তী পরিমাপ ছিল ৮,৮৪৭ মিটার (২৯,০২৯ ফুট), যা ১৯৫৫ সালে ভারতের একটি স্যাটেলাইট মাপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উচ্চতা মাপার ইতিহাস

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপের ইতিহাস একদমই সহজ ছিল না। ১৮৫৬ সালে, ব্রিটিশ শীর্ষস্থানীয় জিওডেটিকিয়ান স্যার জর্জ এভারেস্ট প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের অবস্থান শনাক্ত করেন এবং এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে, তার পরবর্তীকালে উচ্চতা পরিমাপের নানা পদ্ধতি ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। ১৯৫৫ সালে ভারতীয় অভিযাত্রীদের মাপের মাধ্যমে ৮,৮৪৭ মিটার উচ্চতা পাওয়া যায়, যা অনেক বছর ধরে বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ২০২০ সালে নেপাল ও চীনের যৌথ মাপের মাধ্যমে ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার পরিমাপ নিশ্চিত করা হয়, যা বর্তমানে গৃহীত।

ভৌগোলিক গঠন

মাউন্ট এভারেস্টের শিখর পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান হলেও, এর গঠন আরও আকর্ষণীয়। এটি হিমালয় পর্বতমালা এর অংশ, যা মূলত তিব্বত এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সীমান্তে গঠিত। হিমালয় পর্বতমালার গঠন হচ্ছে মূলত টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলস্বরূপ। পৃথিবীর দুটি টেকটনিক প্লেটইউরেশিয়ান প্লেট এবং ইন্ডিয়ান প্লেট—এভারেস্টের এলাকা সংঘর্ষ ঘটিয়ে এই বিশাল পর্বতটি সৃষ্টি করেছে।

হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বতশ্রেণী, যা একদিকে তিব্বত এবং অন্যদিকে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান—এই দেশগুলোকে ঘিরে রেখেছে।


মাউন্ট এভারেস্টের পরিচিতি এবং স্থানীয় জনগণ

মাউন্ট এভারেস্ট শুধু পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতই নয়, এটি স্থানীয় জনগণের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই পর্বতটি স্থানীয় মানুষের কাছে একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক আইকন এবং তাদের জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে। মাউন্ট এভারেস্টের কাছে বসবাসকারী জনগণদের মধ্যে শেরপা জনগণের নাম উল্লেখযোগ্য, যারা অভিযানের জন্য বিখ্যাত।

শেরপা জনগণ ও তাদের ভূমিকা

শেরপা জনগণ মূলত নেপালের সোলুখুম্বু জেলার অধিবাসী। তারা মাউন্ট এভারেস্ট এবং অন্যান্য উচ্চ পর্বতে অভিযাত্রীদের সহায়তা করে থাকে। শেরপারা মূলত অভিযাত্রীদের জন্য গাইডপোর্টার হিসেবে কাজ করেন, তাদের বিশেষ দক্ষতা ও উচ্চতার অভিযানে অভিজ্ঞতার কারণে। শেরপাদের শারীরিক গঠন, উচ্চতায় অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, এবং মানসিক প্রস্তুতি তাদেরকে এভারেস্ট অভিযানের জন্য আদর্শ গাইড করে তোলে।

তবে শেরপাদের জীবনযাত্রা শুধুমাত্র পর্বতারোহীদের সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান রক্ষা করে আসছে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলিতে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব রয়েছে এবং তাদের বিভিন্ন উৎসব এবং আচার-অনুষ্ঠানে পর্বত এবং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয়।

তিব্বতের জনগণ

এভারেস্টের তিব্বত অংশের লোকেরা “ছুমলাংমা” নামে এই পর্বতকে পূজা করে। তিব্বতিরা এটিকে তাদের ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় বিশ্বাস এর অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান এবং অনেক তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবে এটি পরিগণিত হয়।


মাউন্ট এভারেস্টের অভিযানে ইতিহাস

মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পৌঁছানোর প্রথম সফল অভিযান ১৯৫৩ সালের ২৯ মে ঘটে, যখন এডমন্ড হিলারি (নিউ জিল্যান্ড) এবং তেনজিং নরগে (শেরপা) প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পৌঁছান। এটি ছিল মানব ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক অর্জন, এবং তারা বিশ্বের প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানে পৌঁছান। তাদের এই সফল অভিযানের পর, মাউন্ট এভারেস্ট আরো অনেক অভিযাত্রীকে আকর্ষণ করেছে।

অভিযানের রোডম্যাপ

মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পৌঁছানোর জন্য পর্বতারোহীদের একাধিক অভিযাত্রার মাধ্যমে বিশেষ কৌশল ও পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়েছে। একদিকে যেখানে তীব্র শীতল আবহাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অল্প অক্সিজেন পরিবেশ অভিযাত্রীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে অন্যদিকে পাহাড়ে আরোহণের জন্য সঠিক পথে নিরাপদ চলাচলও অত্যন্ত জরুরি। অভিযানকারী দলগুলোর জন্য অক্সিজেন ট্যাঙ্ক এবং শিকল-পাহাড়ি চিত্র তৈরি করা হয়, যাতে অভিযাত্রীরা শিখরে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বহন করতে পারে।

বর্তমান অভিযানে চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে, মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের চ্যালেঞ্জ কিছুটা পরিবর্তিত হলেও, এটি এখনও অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং কঠিন। উচ্চতার কারণে শ্বাসকষ্ট, বরফের ঝড় এবং প্রাকৃতিক বিপদগুলো সহ্য করতে গিয়ে অনেক অভিযাত্রী জীবন হারিয়েছেন। তবে, আধুনিক প্রযুক্তি যেমন GPS, ড্রোন এবং স্যাটেলাইট ইমেজিং অভিযাত্রীদের জন্য আরোহণের কাজ সহজ করেছে।

এই এভারেস্টে বছরে ৭০০-৮০০ জনেরও বেশি মানুষ আরোহণ করেন, তবে শ্বাসকষ্ট, তুষারঝড় এবং ভূমিধসের মতো চ্যালেঞ্জ এখনও বহাল রয়েছে। বর্তমানে, শুধুমাত্র প্রস্তুত, প্রশিক্ষিত এবং পর্যাপ্ত উপকরণসম্পন্ন অভিযাত্রীদেরই শিখরে পৌঁছানোর অনুমতি দেওয়া হয়।


মাউন্ট এভারেস্টের পরিবেশগত সমস্যা

মাউন্ট এভারেস্ট শুধুমাত্র পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত নয়, এটি এক নৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রও। এই পর্বতটি পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন, যা মূলত মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে বেড়ে চলেছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং এর প্রভাব

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর প্রভাব মাউন্ট এভারেস্টেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। হিমবাহের গলন, বরফের স্তরের হ্রাস এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধি এই অঞ্চলে অস্থির পরিবেশ তৈরি করছে। বিশেষত, হিমবাহ গলন এক বিশেষ দুশ্চিন্তার বিষয়, কারণ এটি নেপাল এবং তিব্বতের কয়েকটি নদী এবং জলাশয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। এই গলনের ফলে মাউন্ট এভারেস্টের আশপাশের এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

পর্যটন এবং দূষণ

মাউন্ট এভারেস্টে পর্যটকদের আগমন বাড়ানোর ফলে, সেখানে পরিবেশগত দূষণও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার অভিযাত্রী ও তাদের সহায়ক কর্মী এই অঞ্চলে আসে এবং তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক, কাগজ এবং অন্যান্য আবর্জনা মাউন্ট এভারেস্টের পাদদেশে জমে যায়। এর মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল, পরিত্যক্ত অক্সিজেন ট্যাঙ্ক এবং ড্রাগন ফুড প্যাকেট অনেকাংশে জমা হয়ে থাকে, যা মাউন্ট এভারেস্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।

শুধু তা-ই নয়, মাউন্ট এভারেস্টের ওপর মৃতদেহের উপস্থিতিও একটি বড় সমস্যা। বহু অভিযাত্রী শিখরে পৌঁছানোর পথে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাদের দেহগুলো শিখরের কাছাকাছি স্থানে পড়ে থাকে। এই মৃতদেহগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং যথাযথভাবে তাদের দেহের অবশেষ সরানো একটি গুরুতর পরিবেশগত ও মানবিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মাউন্ট এভারেস্টের আসন্ন ভবিষ্যত

মাউন্ট এভারেস্টের ভবিষ্যত অনেকাংশে এর পরিবেশ ও মানবিক ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে। এখানকার জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযানের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা

মাউন্ট এভারেস্টে অভিযাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং এই বৃদ্ধি ভবিষ্যতে আরও হতে পারে। এর ফলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং নেপাল সরকারের উদ্যোগে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একদিকে, অতিরিক্ত পর্যটক আগমনে যে পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা সমাধানে সরকারগুলো কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে। অন্যদিকে, অভিযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আরো আধুনিক এবং সুরক্ষিত উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার

মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত উন্নত হচ্ছে। ড্রোন এবং স্যাটেলাইট ইমেজিং সহ নতুন প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, যা অভিযাত্রীদের নিরাপত্তা এবং পর্বতটির পর্যবেক্ষণে সহায়ক। এছাড়া, অভিযাত্রীদের জন্য আরও উন্নত অক্সিজেন ট্যাঙ্ক এবং রুট মনিটরিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা শিখরে পৌঁছানোর পথটিকে নিরাপদ ও সঠিক রাখে।

পরিবেশ রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

পর্যটন বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নেপাল সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি একত্রিত হয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন:

  • গাইডলাইন ও আইন: অভিযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন নিয়মাবলী তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা পরিবেশ রক্ষা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে।
  • পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্প: পরিবেশ রক্ষা করার জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে অবাঞ্ছিত আবর্জনা পরিষ্কার করা এবং মৃতদেহগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।

মাউন্ট এভারেস্টে উঠার জন্য প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় গাইডলাইন

মাউন্ট এভারেস্টে সফলভাবে আরোহণ করার জন্য কঠোর শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। এটি এমন একটি অভিযান, যেখানে একমাত্র অভিজ্ঞ ও প্রস্তুত অভিযাত্রীরাই শিখরে পৌঁছানোর সুযোগ পান।

শারীরিক প্রস্তুতি

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা এতটাই বেশি যে, অভিযাত্রীরা একদিনেই শিখরে পৌঁছানোর আশা করতে পারেন না। তাই তাদের জন্য ফিটনেস ট্রেনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কার্ডিও, স্ট্রেংথ ট্রেনিং এবং হাইকিং প্রশিক্ষণ মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে সহায়ক হয়। দীর্ঘ সময়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর চাপ আসবে, তাই শারীরিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

এভারেস্টে আরোহণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • শীতের কাপড়: অত্যন্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচতে, বিশেষ করে শিখরের কাছাকাছি অত্যন্ত ঠাণ্ডা এলাকায়।
  • অক্সিজেন ট্যাঙ্ক: উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, তাই অতিরিক্ত অক্সিজেন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • জিপসিয়াম গ্লাভস এবং বরফের আছড়: বরফের মধ্যে চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

অনুমতি ও আইন

এই এভারেস্টে আরোহণের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়, যা নেপাল বা চীনের সরকার থেকে পাওয়া যায়। নেপাল সরকার অভিযাত্রীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করেছে এবং শিখরে পৌঁছানোর জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। তাছাড়া, তিব্বত অঞ্চলে আরোহণের জন্য চীনের অনুমতি এবং শর্তাবলী অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।


মাউন্ট এভারেস্ট: বিশ্বমানের আকর্ষণ

মাউন্ট এভারেস্ট শুধু পর্বতারোহীদের জন্য নয়, এটি বিশ্বের অনেক মানুষের জন্য বিশ্বমানের আকর্ষণ। এটি এক বিশাল ঐতিহাসিক সম্পদ এবং বহু অভিযাত্রী ও গবেষক এখানে এসে তাদের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে গেছেন। একে একে বহু অভিযাত্রী শিখরে পৌঁছানোর জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং প্রতিটি অভিযানের নিজস্ব গল্প রয়েছে।

বিশ্বখ্যাত অভিযাত্রীদের কথা

বিশ্বের অন্যতম সেরা অভিযাত্রীরা তাদের অসীম সাহসিকতা এবং ধৈর্যের মাধ্যমে এভারেস্ট শিখরে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নরগে হলেন প্রথম সফল অভিযাত্রী, যাদের এভারেস্ট অভিযানের গল্প আজও বিশ্বব্যাপী প্রেরণা দেয়। আজও বহু মানুষ তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখে।


FAQ: মাউন্ট এভারেস্ট সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন

১. মাউন্ট এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত?
মাউন্ট এভারেস্ট নেপাল এবং চীনের (তিব্বত) সীমানায় অবস্থিত। এটি হিমালয় পর্বতমালার অংশ এবং নেপালের সোলুখুম্বু জেলা ও তিব্বতের সীমানায় অবস্থিত।

২. মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কত?
মাউন্ট এভারেস্টের শিখর ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট) উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছে। ২০২০ সালে নেপাল ও চীনের যৌথ পরিমাপে এই নতুন উচ্চতা নিশ্চিত করা হয়।

৩. মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে প্রথম কে পৌঁছান?
১৯৫৩ সালের ২৯ মে, এডমন্ড হিলারি (নিউ জিল্যান্ড) এবং তেনজিং নরগে (শেরপা) মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে প্রথমবারের মতো পৌঁছান।

৪. মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে?
মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, তীব্র ঠাণ্ডা, বরফঝড় এবং উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের অভাব। এছাড়া, পরিবেশগত দূষণ ও নিরাপত্তা সমস্যাও বড় চ্যালেঞ্জ।

৫. মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের জন্য কি অনুমতি প্রয়োজন?
হ্যাঁ, মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের জন্য নেপাল বা তিব্বতের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি (পারমিট) প্রয়োজন হয়। এছাড়া, শিখরে পৌঁছানোর জন্য প্রমাণিত অভিজ্ঞতার প্রয়োজন থাকে।

আরও পড়ুন: হিমালয় পর্বত কোথায় অবস্থিত ? সংক্ষিপ্ত পরিচিতি


উপসংহার

মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম পর্বত এবং পৃথিবীজুড়ে হাজার হাজার অভিযাত্রীর স্বপ্নের স্থান। এটি একদিকে প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি, অন্যদিকে এটি একটি পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক এবং মানবিক চ্যালেঞ্জের স্থানও বটে। ভবিষ্যতে মাউন্ট এভারেস্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এভারেস্টকে আরো দীর্ঘকাল ধরে মানুষের জন্য সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top