বায়ু দূষণ কাকে বলে, বায়ু দূষণ হলো বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি, যা মানুষের স্বাস্থ্য, প্রাণীকুল, উদ্ভিদজীবন, এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন বাতাসের সাথে গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে ধূলিকণা, রাসায়নিক পদার্থ, বা গ্যাসের মতো ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত হয়, তখন তাকে বায়ু দূষণ বলা হয়। এই দূষিত বায়ু মানুষের স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে এবং পরিবেশগত ভারসাম্যও বিঘ্নিত হয়।
বর্তমান সময়ে বায়ু দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি কেবল জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণও। এই প্রবন্ধে আমরা বায়ু দূষণের কারণ, প্রভাব, এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বায়ু দূষণের সংজ্ঞা (Definition of Air Pollution)
বায়ু দূষণ হলো বাতাসে এমন ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি যা জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। বায়ু দূষণ তখনই ঘটে যখন বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে দূষিত পদার্থ জমা হয় এবং তা বাতাসের গুণগত মানকে নষ্ট করে।
বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক গঠন:
পৃথীবির বায়ুমণ্ডল মূলত নাইট্রোজেন (৭৮%) এবং অক্সিজেন (২১%) নিয়ে গঠিত। বাকি ১% অংশে অন্যান্য গ্যাস যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন, এবং অন্যান্য অণুগুলি উপস্থিত থাকে। তবে যখন এই স্বাভাবিক গঠনে ক্ষতিকর গ্যাস বা রাসায়নিক পদার্থ যোগ হয়।
প্রাকৃতিক বনাম মানবসৃষ্ট বায়ু দূষণ:
বায়ু দূষণ দুই ধরনের হতে পারে—প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট:
- প্রাকৃতিক দূষণ: প্রাকৃতিক উপায়ে যেমন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বনের আগুন, ধূলিঝড় ইত্যাদির মাধ্যমে বায়ুতে কিছু ক্ষতিকর গ্যাস এবং ধূলিকণা মিশ্রিত হয়।
- মানবসৃষ্ট দূষণ: কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নিষ্কাশন, রাসায়নিক সার এবং জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার মানবসৃষ্ট বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা না হলে এটি জীবজগতের জন্য বড় হুমকির মুখে পড়বে । এই প্রবন্ধে আমরা মূলত মানবসৃষ্ট বায়ু দূষণের ওপর আলোকপাত করবো।
বায়ু দূষণের কারণ (Causes of Air Pollution)
বায়ু দূষণের কারণগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট। যদিও প্রাকৃতিক কারণগুলিও বায়ু দূষণে ভূমিকা রাখে, তবে বর্তমান সময়ে মানবসৃষ্ট কারণগুলি বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মানবসৃষ্ট বায়ু দূষণ:
মানবসৃষ্ট দূষণের মধ্যে প্রধান কারণগুলি হলো শিল্পায়ন, যানবাহনের ধোঁয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কৃষিকাজে রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত ব্যবহার। এই দূষণগুলো সরাসরি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা ক্রমাগত বায়ুর গুণগত মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নিচে মানবসৃষ্ট বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
- শিল্প এবং কলকারখানার ধোঁয়া: শিল্প ও কারখানা (Industries and Factories): শিল্প কারখানা থেকে সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) এবং অন্যান্য রাসায়নিক গ্যাস নির্গত হয়। এটি সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দূষণের উৎস।
- যানবাহনের ধোঁয়া: যানবাহন থেকে কার্বন মনোক্সাইড (CO), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx), এবং অন্যান্য গ্যাস নিঃসরিত হয়, যা বায়ুদূষণের প্রধান কারণ।
- জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার: বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির (যেমন কয়লা, তেল) ব্যবহার বায়ু দূষণের প্রধান উৎস।
- কৃষিকাজে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার: আধুনিক কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সার এবং কীটনাশক বায়ুতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছড়ায়, যা বায়ু দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
প্রাকৃতিক বায়ু দূষণ:
বায়ু দূষণের প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণগুলিও অনেক সময় মারাত্মক হতে পারে, তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক দূষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: অগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা এবং গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।
- বনের আগুন: প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের অসাবধানতায় জঙ্গলে আগুন লাগলে তা থেকে ধোঁয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস বায়ুতে মিশে দূষণ তৈরি করে যা বায়ু দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
- ধূলিঝড়: মরুভূমি বা শুষ্ক অঞ্চলে ধূলিঝড়ের ফলে বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা জমে যায়, যার কারনে বায়ু দূষণের সৃষ্টি করে।
বায়ু দূষণের প্রধান উপাদান (Major Pollutants in Air Pollution)
বায়ু দূষণের প্রধান উপাদানগুলো হলো ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, এবং রাসায়নিক পদার্থ, যা বায়ুমণ্ডলের গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। এই উপাদানগুলো মানুষ এবং পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে যা মানুষের ও পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়। নিচে বায়ু দূষণের প্রধান উপাদানগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂):
- কার্বন ডাই অক্সাইড হলো বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান উপাদান। এটি মূলত জীবাশ্ম জ্বালানির জ্বালানোর ফলে উৎপন্ন হয় এবং গ্রীনহাউস প্রভাব বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
- বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মিশে গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) বা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে পৃথিবীর জলবায়ু ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাড়াবে।
কার্বন মনোক্সাইড (CO):
- কার্বন মনোক্সাইড একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন গ্যাস, যা মূলত যানবাহনের নিষ্কাশন থেকে নির্গত হয়। এটি যানবাহনের নিষ্কাশন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
- কার্বন মনোক্সাইড শরীরে অক্সিজেনের পরিবহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂):
- সালফার ডাই অক্সাইড মূলত কয়লা, তেল, এবং অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সময় নির্গত হয়। এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদীভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হাঁপানির ও আরও অনন্য রোগ বালাই হতে পারে।
- এছাড়া, সালফার ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মিশে এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করে, যা উদ্ভিদ, প্রাণী, এবং পানি সম্পদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
পার্থিকুলেট ম্যাটার (PM2.5 এবং PM10):
- পার্থিকুলেট ম্যাটার হলো বায়ুতে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা, যা সাধারণত শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহনের নিষ্কাশন থেকে নির্গত হয়। PM2.5 এবং PM10 হলো দুই ধরনের পার্থিকুলেট ম্যাটার, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
- PM2.5 হলো ২.৫ মাইক্রোমিটারের ছোট ধূলিকণা, যা সহজেই ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ, এবং অন্যান্য গুরুতর শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
বায়ু দূষণের প্রভাব (Effects of Air Pollution)
বায়ু দূষণ সরাসরি আমাদের জীবনযাত্রা, পরিবেশ, এবং অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলে। বায়ু দূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো মানবস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ হতে পারে।
মানুষের স্বাস্থ্যে প্রভাব:
বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে। কিছু উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি হলো:
- শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা: দূষিত বায়ুতে শ্বাস নিলে ফুসফুসের সমস্যা যেমন হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এবং ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং তাতে মূতুরও বুকি থাকে।
- হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি: বায়ুতে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস যেমন কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়ে।
- শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর প্রভাব: বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের এবং বৃদ্ধদের, কারণ তাদের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়া শিশুদের ফুসফুসের বিকাশে সমস্যা করতে পারে এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে হাঁপানি ও অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।
পরিবেশগত প্রভাব:
বায়ু দূষণ কেবল মানুষকেই প্রভাবিত করে না, বরং পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত প্রভাব হলো:
- গ্রীনহাউস প্রভাব এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি: কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমন গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
- এসিড বৃষ্টি: সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মিশে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করে। এসিড বৃষ্টি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, উদ্ভিদ এবং পানির সম্পদের ক্ষতি করে।
- জীববৈচিত্র্যে ক্ষতি: বায়ু দূষণ উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং অনেক প্রাণী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মারা যায়।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
বায়ু দূষণের কারণে সমাজে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। এটি মানুষের স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় এবং কর্মক্ষমতার হ্রাস ঘটায়।
- চিকিৎসা ব্যয়: বায়ু দূষণের কারণে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এবং হৃদরোগের চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধি পায়, যা জাতীয় অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করে।
- কর্মক্ষমতা হ্রাস: শারীরিক অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা কমে যায়, যা শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাকে হ্রাস করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।
বায়ু দূষণের প্রতিকার (Solutions to Air Pollution)
বায়ু দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা হওয়ায়, এর প্রতিরোধে ব্যক্তিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো নিয়মিত কার্যকর করা গেলে বায়ু দূষণ রোধ করা সম্ভব।
ব্যক্তিগত উদ্যোগ:
বায়ু দূষণ রোধে ব্যক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে:
- গাছ লাগানো: গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে, যা বায়ুর মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
- গাড়ির ব্যবহার কমানো: ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহন বা সাইকেল ব্যবহার করা দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
- প্লাস্টিক এবং রাসায়নিক পণ্যের ব্যবহার হ্রাস: পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সরকারি উদ্যোগ:
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন:
- শিল্প স্থাপনার মান নিয়ন্ত্রণ: শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্গমন মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি স্থাপন করতে হবে।
- বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ: বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন এবং কঠোরভাবে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
- সবুজ জ্বালানি ব্যবহার: জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সোলার এবং বায়ু শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।
আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা:
বায়ু দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
- প্যারিস চুক্তি: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ প্যারিস চুক্তি অনুসারে তাদের কার্বন নির্গমন হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিভিন্ন দেশের সরকার এবং পরিবেশ সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। উন্নত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হচ্ছে, যাতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং বায়ু দূষণের সমস্যা কমানো যায়।
বায়ু দূষণ নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা (Frequently Asked Questions about Air Pollution)
বায়ু দূষণ কীভাবে ঘটে?
বায়ু দূষণ ঘটে যখন বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা এবং রাসায়নিক পদার্থ মিশে যায়, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
কোন গ্যাসগুলো বায়ু দূষণের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর?
বায়ু দূষণের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর গ্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂), কার্বন মনোক্সাইড (CO), সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂), এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO₂)।
বায়ু দূষণ থেকে কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়?
বায়ু দূষণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মাস্ক পরা, দূষিত এলাকায় সময় কম কাটানো, এবং ঘরের ভেতরে বায়ুর মান উন্নত রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে?
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে বায়ুর গুণগত মান পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে ফিল্টারিং প্রযুক্তি, এবং সবুজ জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বায়ু দূষণের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ (Current Situation and Future Outlook on Air Pollution)
বর্তমান সময়ে বায়ু দূষণ বিশ্বব্যাপী এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশেষত শহরাঞ্চলে বায়ুর মান ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
বর্তমান পরিস্থিতি:
বিশ্বের অনেক বড় শহর যেমন দিল্লি, বেইজিং, এবং ঢাকা, উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের শিকার। এসব শহরে বায়ুর মান এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
ভবিষ্যৎ প্রতিকার ও চ্যালেঞ্জ:
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি, সবুজ জ্বালানির ব্যবহার, এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব। তবে, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার এই সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলছে। তাই, আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে দায়িত্ব নিতে হবে এবং পরিবেশের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
অরও পড়ুন: মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণ: পরিবেশ ও সমাজের উপর প্রভাব এবং প্রতিরোধের উপায়
উপসংহার (Conclusion)
বায়ু দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর নয়, পরিবেশ এবং অর্থনীতির ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছ লাগানো, জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার, এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা বায়ুর মান উন্নত করতে পারি। একসঙ্গে কাজ করে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বায়ু দূষণ কাকে বলে যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচে মন্তব্য করুন। পোস্টটি যদি তথ্যবহুল মনে হয়, তবে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!