সিস্ট হলে কি সমস্যা হয় ? শরীরের কোথাও “সিস্ট” (Cyst) ধরা পড়েছে—এই কথাটি শোনার পর মনে হাজারো প্রশ্ন ও উদ্বেগ জমা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সিস্ট শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে, ডিম্বাশয়ে সিস্টের কথা শুনলে মাতৃত্বের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর দুশ্চিন্তা কাজ করে। কিন্তু এই ভয় বা উদ্বেগের কতটা বাস্তবতা রয়েছে?
সত্যিটা হলো, সিস্ট অত্যন্ত সাধারণ একটি শারীরিক অবস্থা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সম্পূর্ণ নিরীহ ও ক্যানসারবিহীন। এই আর্টিকেলের লক্ষ্য হলো, সিস্ট সম্পর্কিত সকল ভয় ও ভুল ধারণা দূর করে আপনাকে একটি পরিষ্কার, বৈজ্ঞানিক এবং সহানুভূতিশীল নির্দেশনা প্রদান করা। আমরা সিস্টের একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে এর প্রকারভেদ, সম্ভাব্য সমস্যা, গর্ভধারণে এর প্রভাব এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এমনভাবে আলোচনা করব, যেন আপনার মনে আর কোনো দ্বিধা না থাকে।
সিস্ট কী এবং সিস্ট হলে কি সমস্যা হয় ?
এই সিস্ট হলো শরীরের যেকোনো স্থানে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে তৈরি হওয়া একটি থলে বা পকেট, যা সাধারণত তরল, বায়বীয় পদার্থ বা আধা-কঠিন বস্তু দ্বারা পূর্ণ থাকে। এটিকে আপনি একটি ক্ষুদ্র পানির বেলুনের সাথে তুলনা করতে পারেন। সিস্ট ত্বকের নিচে থেকে শুরু করে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন—ডিম্বাশয়, কিডনি, লিভার বা ব্রেস্টের ভেতরেও হতে পারে।
সিস্ট তৈরি হওয়ার মূল কারণগুলো: সিস্ট কোনো একক কারণে হয় না, এর পেছনে বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া জড়িত থাকতে পারে।
- হরমোনের প্রভাব: বিশেষ করে নারীদের ডিম্বাশয়ে সিস্ট (Ovarian Cysts) তৈরি হওয়ার পেছনে হরমোনের মাসিক চক্রের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ওঠানামার ফলে ফাংশনাল সিস্ট তৈরি হতে পারে।
- নালী বন্ধ হয়ে যাওয়া (Blockage of Ducts): শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির নালী বন্ধ হয়ে গেলে তার থেকে নিঃসৃত রস জমে সিস্ট তৈরি হতে পারে। যেমন, ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে সেবাসিয়াস সিস্ট তৈরি হয়।
- কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: শরীরের স্বাভাবিক কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিলে সিস্ট তৈরি হতে পারে।
- ইনফেকশন বা সংক্রমণ: কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর সংক্রমণের ফলেও সিস্ট তৈরি হতে পারে।
- জেনেটিক বা বংশগত কারণ: কিছু রোগ, যেমন পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (PKD), বংশগতভাবে পরিবারে চলতে থাকে এবং এর ফলে কিডনিতে অসংখ্য সিস্ট তৈরি হয়।
- দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Chronic Inflammation): শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে প্রদাহ থাকলে তা কোষের গঠন পরিবর্তন করে সিস্ট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
সাধারণ সিস্টের প্রকারভেদ
সিস্টের অবস্থান এবং গঠনের উপর ভিত্তি করে এদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। নিচে কিছু সাধারণ প্রকারের সিস্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ক. ডিম্বাশয়ের সিস্ট (Ovarian Cysts)
নারীদের মধ্যে এটি সবচেয়ে পরিচিত। প্রতি মাসে ঋতুচক্রের অংশ হিসেবে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
- ফাংশনাল সিস্ট (Functional Cysts): এগুলো সবচেয়ে সাধারণ এবং নিরীহ।
- ফলিকুলার সিস্ট (Follicular Cyst): প্রতি মাসে ডিম্বাশয়ের ভেতরে ফলিকল নামক থলের মধ্যে ডিম্বাণু বড় হয়। যদি কোনো কারণে ফলিকলটি ফেটে ডিম্বাণু বের হতে না পারে, তবে এটি বড় হয়ে ফলিকুলার সিস্টে পরিণত হয়।
- কর্পাস লুটিয়াম সিস্ট (Corpus Luteum Cyst): প্রতি মাসে ডিম্বাণু মুক্ত হওয়ার পর ফলিকলের খালি অংশটি কর্পাস লুটিয়াম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সাধারণত এটি নিজে থেকেই সংকুচিত হয়ে যায়, কিন্তু কখনো কখনো এর ভেতরে তরল জমে এটি একটি থলের আকার নেয়, যা কর্পাস লুটিয়াম সিস্ট নামে পরিচিত। এই উভয় সিস্টই সাধারণত ১-৩ মাসের মধ্যে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই মিলিয়ে যায়।
- প্যাথলজিক্যাল সিস্ট (Pathological Cysts): এগুলো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে তৈরি হয়।
- ডারময়েড সিস্ট (Dermoid Cysts): এই সিস্টগুলোর মধ্যে চুল, দাঁত, ত্বক বা চর্বির মতো বিভিন্ন টিস্যু পাওয়া যেতে পারে। এগুলো সাধারণত ক্যানসারবিহীন হয়।
- সিস্টাডেনোমাস (Cystadenomas): ডিম্বাশয়ের পৃষ্ঠ থেকে তৈরি হওয়া এই সিস্টগুলো পানি বা শ্লেষ্মাজাতীয় তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে।
- এন্ডোমেট্রিওমাস (Endometriomas): এন্ডোমেট্রিওসিস নামক রোগের কারণে এই সিস্টগুলো তৈরি হয়। জরায়ুর ভেতরের টিস্যু (এন্ডোমেট্রিয়াম) যখন ডিম্বাশয়ের উপর জন্মায় এবং প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সময় রক্তক্ষরণ করে, তখন সেই পুরোনো রক্ত জমে এই সিস্ট তৈরি হয়, যা দেখতে চকলেটের মতো হওয়ায় একে ‘চকলেট সিস্ট’ও বলা হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এটি একটি হরমোনজনিত বা এন্ডোক্রাইন ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের পৃষ্ঠে আঙ্গুরের থোকার মতো অসংখ্য ছোট ছোট অপরিণত ফলিকল বা সিস্ট দেখা যায়।
খ. ব্রেস্ট সিস্ট (Breast Cysts)
নারীদের স্তনে এক বা একাধিক তরল ভর্তি থলে তৈরি হতে পারে, যা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এগুলো হরমোনের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রায় সবসময়ই ক্যানসারবিহীন হয়।
গ. ত্বকের সিস্ট (Skin Cysts)
- এপিডারময়েড সিস্ট (Epidermoid Cysts): ত্বকের নিচে কেরাটিন নামক প্রোটিন জমে তৈরি হয়।
- সেবাসিয়াস সিস্ট (Sebaceous Cysts): ত্বকের তেল নিঃসরণকারী গ্রন্থি (সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড) বন্ধ হয়ে তৈরি হয়।
ঘ. অন্যান্য সাধারণ সিস্ট
- গ্যাংলিয়ন সিস্ট (Ganglion Cysts): হাত বা পায়ের জয়েন্টের আশেপাশে তৈরি হয়।
- কিডনি সিস্ট (Renal Cysts): কিডনিতে তৈরি হওয়া সাধারণ সিস্ট, যা প্রায়শই কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকে।
সিস্ট হলে কি কি সমস্যা হতে পারে? (লক্ষণ ও ঝুঁকি)
বেশিরভাগ সিস্টই নীরব ঘাতকের মতো কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরে অবস্থান করে। অন্য কোনো রোগের জন্য পরীক্ষা করতে গিয়ে হয়তো হঠাৎ করে এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। তবে সিস্টের আকার, অবস্থান এবং ধরনের উপর ভিত্তি করে কিছু লক্ষণ ও সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- ব্যথা: সিস্টের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো ব্যথা। এটি হালকা বা তীব্র, উভয়ই হতে পারে। ডিম্বাশয়ের সিস্টের ক্ষেত্রে তলপেটে, কোমরে বা উরুতে একটানা হালকা ব্যথা বা হঠাৎ তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- ফোলা বা চাকা: ত্বক বা ব্রেস্টের সিস্টগুলো বাইরে থেকে একটি মসৃণ চাকা বা ফোলা অংশ হিসেবে অনুভূত হয়।
- চাপজনিত অনুভূতি: অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সিস্ট আকারে বড় হলে আশেপাশের অঙ্গের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যেমন, ডিম্বাশয়ের বড় সিস্ট মূত্রথলির উপর চাপ দিয়ে ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
- মাসিকের অনিয়ম: ডিম্বাশয়ের সিস্ট, বিশেষ করে PCOS, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে মাসিকের অনিয়ম, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- হজম ও পেটের সমস্যা: তলপেটের সিস্টের কারণে পেট ফাঁপা, বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সিস্টের জটিলতা (Complications):
- ফেটে যাওয়া (Rupture): সিস্ট ফেটে গেলে এর ভেতরের তরল পদার্থ পেটের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে হঠাৎ তীব্র ব্যথা ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- প্যাঁচ খাওয়া (Torsion): ডিম্বাশয়ের সিস্ট তার বোঁটার সাথে প্যাঁচ খেয়ে গেলে ডিম্বাশয়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি শুরু হতে পারে। এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং দ্রুত সার্জারির প্রয়োজন হয়।
- ইনফেকশন ও প্রদাহ: সিস্টে জীবাণু সংক্রমণ হলে সেখানে পুঁজ জমে ফোঁড়া তৈরি হতে পারে, যা থেকে জ্বর ও তীব্র ব্যথা হয়।
- ক্যানসারের ঝুঁকি: যদিও অত্যন্ত বিরল, কিছু সিস্ট (বিশেষ করে পোস্ট-মেনোপোজাল নারীদের ক্ষেত্রে জটিল গঠনের ডিম্বাশয়ের সিস্ট) ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসারযুক্ত হতে পারে। একারণেই যেকোনো সিস্ট ধরা পড়লে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকা জরুরি।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় না?
এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথমেই বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিস্ট এবং বন্ধ্যাত্বের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। সিস্ট থাকা মানেই আপনি মা হতে পারবেন না, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সিস্ট গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
যেসব সিস্ট গর্ভধারণে প্রভাব ফেলে না:
- ফাংশনাল সিস্ট (ফলিকুলার ও কর্পাস লুটিয়াম): এই সিস্টগুলো ডিম্বস্ফোটনের স্বাভাবিক লক্ষণ। এর উপস্থিতি বরং প্রমাণ করে যে আপনার ডিম্বাশয় গর্ভধারণের জন্য সক্রিয় রয়েছে।
যেসব সিস্ট গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি করতে পারে:
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): আগেই বলা হয়েছে, PCOS-এ সিস্টগুলো নিজেরা সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যার কারণে প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে বের হতে (ডিম্বস্ফোটন) পারে না। ডিম্বস্ফোটন না হলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। তবে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে ও ডিম্বস্ফোটন ঘটিয়ে PCOS থাকা সত্ত্বেও সফলভাবে গর্ভধারণ করা সম্ভব।
- এন্ডোমেট্রিওমাস বা চকলেট সিস্ট: এই সিস্টগুলো ডিম্বাশয়ের সুস্থ টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ডিম্বাণুর গুণমান বা সংখ্যা (Ovarian Reserve) কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া এন্ডোমেট্রিওসিস রোগের কারণে ফেলোপিয়ান টিউব বা জরায়ুর আশেপাশে যে প্রদাহ তৈরি হয়, তা শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন এবং ভ্রূণ স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- বড় আকারের অন্যান্য সিস্ট: ডিম্বাশয়ের সিস্ট আকারে অনেক বড় হয়ে গেলে তা ফেলোপিয়ান টিউবের উপর চাপ সৃষ্টি করে বা এর অবস্থান পরিবর্তন করে ডিম্বাণু চলাচলের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
করণীয়: আপনার সিস্টটি কোন ধরণের এবং এটি উর্বরতার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, তা জানার জন্য একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা অপরিহার্য। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ক্ষতিকর সিস্ট অপসারণ করে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়ানো যায়।
রোগ নির্ণয় ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি
- রোগ নির্ণয়:
- আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram): এটি সিস্ট নির্ণয়ের প্রধান এবং সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সিস্টের আকার, আকৃতি, অবস্থান এবং এর ভেতরে থাকা পদার্থের ধরন (তরল না কঠিন) সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
- রক্ত পরীক্ষা: চিকিৎসকরা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত করেন: PCOS আছে কিনা তা জানতে হরমোন টেস্ট করা হয় এবং ক্যানসারের সম্ভাবনা যাচাই করতে CA-125 নামের টিউমার মার্কার পরীক্ষাটি করা হতে পারে।
- সিটি স্ক্যান বা এমআরআই: সিস্টের আরও বিস্তারিত চিত্র পেতে বা এটি আশেপাশের অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা দেখার জন্য এই পরীক্ষাগুলো করা হয়।
- চিকিৎসা:
- পর্যবেক্ষণ (Watchful Waiting): ছোট, লক্ষণবিহীন এবং নিরীহ চেহারার সিস্টের ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত কোনো চিকিৎসা না করে পর্যবেক্ষণে রাখেন।
- ঔষধ: PCOS-এর ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং মাসিকের চক্র নিয়মিত করতে জন্মবিরতিকরণ পিল বা অন্যান্য ঔষধ দেওয়া হয়।
- সার্জারি (Surgery): সিস্ট যদি আকারে বড় হয় (সাধারণত ৫-১০ সে.মি.-এর বেশি), তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে, ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে বা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে, তবে সার্জারির মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হয়। ল্যাপারোস্কোপি (Laparoscopy) হলো একটি আধুনিক পদ্ধতি যেখানে পেট না কেটে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যামেরা ও যন্ত্র ঢুকিয়ে সিস্ট অপসারণ করা হয়। এতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: সিস্ট হলে কি কি সমস্যা হয় ?
উত্তর: বেশিরভাগ সিস্ট কোনো সমস্যা করে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা, ফোলাভাব, মাসিকের অনিয়ম এবং বিরল ক্ষেত্রে সিস্ট ফেটে যাওয়া বা প্যাঁচ লেগে যাওয়ার মতো জটিলতা হতে পারে।
প্রশ্ন: সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় না?
উত্তর: না, বেশিরভাগ সিস্টই বাচ্চা হওয়ার পথে বাধা নয়। শুধুমাত্র PCOS বা এন্ডোমেট্রিওমাসের মতো কিছু নির্দিষ্ট অবস্থার সিস্ট গর্ভধারণকে কিছুটা কঠিন করতে পারে, যার সফল চিকিৎসা সম্ভব।
প্রশ্ন: সিস্ট এবং টিউমারের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: সিস্ট হলো তরল বা নরম পদার্থপূর্ণ থলে। অন্যদিকে, টিউমার হলো কোষের অস্বাভাবিক শক্ত পিণ্ড। সিস্ট সাধারণত ক্যানসারবিহীন হয়, কিন্তু টিউমার ক্যানসারবিহীন (Benign) বা ক্যানসারযুক্ত (Malignant) উভয়ই হতে পারে।
প্রশ্ন: ডিম্বাশয়ের সিস্ট দূর করার উপায় কী?
উত্তর: অনেক সিস্ট নিজে থেকেই মিলিয়ে যায়। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরনের উপর, যার মধ্যে পর্যবেক্ষণ, ঔষধ সেবন বা সার্জারি অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন: সিস্ট হলে কি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা উচিত?
উত্তর: PCOS-এর মতো হরমোনজনিত সিস্টের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট এড়িয়ে চলা উচিত। একটি সুষম ও প্রদাহরোধী (anti-inflammatory) ডায়েট সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আরও জানুন: গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ : সঠিক লক্ষণ, পরীক্ষা এবং করণীয় নির্দেশিকা
উপসংহার
সিস্ট একটি সাধারণ শারীরিক অবস্থা যা নিয়ে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বেশিরভাগ সিস্ট নিরীহ এবং সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে যায়। তবে, যেকোনো সিস্টকেই অবহেলা করা উচিত নয়। এর সঠিক ধরন নির্ণয় এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর, বিশেষ করে উর্বরতার উপর, কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা তা জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে সিস্টের কারণে সৃষ্ট প্রায় সকল সমস্যারই কার্যকর সমাধান রয়েছে। সঠিক জ্ঞান এবং সময়মতো পদক্ষেপই হলো সিস্ট মোকাবেলার মূল চাবিকাঠি।
দাবিত্যাগ (Disclaimer)
এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক এবং জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে লেখা। এটি কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা বা সিদ্ধান্তের জন্য অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।