বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও ইতিহাসের অনন্য সম্মিলনে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকে “প্রাচ্যের অক্সফোর্ড” বলে অভিহিত করেন। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা এর অসংখ্য সাবেক শিক্ষার্থী আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই নিবন্ধে আমরা ঢাকার বুকে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সূচনা থেকে শুরু করে আধুনিক সময়ের অগ্রযাত্রা—সব বিষয়ে বিশদ আলোচনা করবো। লক্ষ্য একটাই: আপনি যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পান।
এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত?
ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত, শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস একদিকে শাহবাগ ও অন্যদিকে নীলক্ষেত এলাকায় বিস্তৃত। কেবল একাডেমিক ভবন নয়, রয়েছে গ্রন্থাগার, আবাসিক হল, গবেষণাকেন্দ্র, খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক পরিসর। - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯২১ সালের ১ জুলাই। উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে আঞ্চলিক শিক্ষার প্রসার আর স্থানীয় মানুষের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ব্রিটিশ ভারত সরকারের উদ্যোগে এবং স্থানীয় অভিজাত ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর গোড়াপত্তন ঘটে। - এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কে?
এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের অবদান থাকলেও মূলত লর্ড রোনাল্ডশ্য, সে সময়ের ব্রিটিশ গভর্নর, শিক্ষাবিদ স্যার ফিলিপ হার্টগ ও ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্যরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া নবাব সলিমুল্লাহ, স্যার আহসানউল্লাহ, সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী—এঁদের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি
প্রতিবছর নানা অনুষদে (ফ্যাকাল্টি) ভর্তির জন্য প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আবেদন করে। বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য, সমাজবিজ্ঞানসহ একাধিক অনুষদের অধীনে বহু ডিপার্টমেন্টে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকে। ভর্তি-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সারসংক্ষেপে আমরা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
উপরের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ে মূল যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হলো—এর অবস্থান, প্রতিষ্ঠাকাল এবং প্রতিষ্ঠাতাদের পরিচয়। তবে এ তো মাত্র শুরু। চলুন, এবার আমরা এ প্রতিষ্ঠানকে খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন ও প্রাথমিক উদ্দেশ্য
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম, হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে। সেই সময় বঙ্গীয় অঞ্চলে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা স্থাপনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপূরক হিসেবে একটি নুতন কেন্দ্রের দরকার ছিল। ঢাকার নবাব পরিবার এবং স্থানীয় অভিজাত মহল এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়ে আসছিলেন।
১. ব্রিটিশ সরকারের আগ্রহ ও স্থানীয় অভিজাতের ভূমিকা
- ব্রিটিশ সরকার চাইছিল পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি নতুন উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র তৈরি করতে, যাতে পল্লী এলাকার মানুষও উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে আসতে পারে।
- ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ ও তাঁর উত্তরসূরিরা জমি ও অর্থসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা দিয়েছিলেন।
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষার প্রসার ঘটানো, যা তখন মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক ছিল।
২. আদর্শ ও নীতিমালা
প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদিতে উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি গবেষণা ও জ্ঞানসৃষ্টি যে কেবল ইউরোপমুখী হবে না, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষাকে গুরুত্ব দেবে—সে লক্ষ্যও ছিল। মুনশি মেহেরউল্লাহ বা সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরীর মতো ব্যক্তিরা চাইতেন, স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞান বাড়াতে হবে।
প্রতিষ্ঠার শুরুর দিনগুলো: কাঠামো ও অনুষদ
প্রাথমিক পর্যায়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় মোট তিনটি অনুষদ (Arts, Science, Law) এবং প্রায় এক ডজনের মতো বিভাগ নিয়ে যাত্রা করে। খুব স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ছিল—কিন্তু মানের দিক থেকে তখনও বেশ উচ্চপর্যায়ের ছিল।
১. প্রথম উপাচার্য ও প্রশাসনিক পরিষদ
- প্রথম উপাচার্য ছিলেন ড. ফিলিপ হার্টগ (Philip Joseph Hartog)। তিনি পূর্বে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছিলেন।
- প্রশাসনিক পরিষদে বিদেশি শিক্ষাবিদরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন স্থানীয় জ্ঞানীগুণীরা। এ কারণেই ইউরোপীয় জ্ঞানচর্চার সঙ্গে স্থানীয় বাস্তবতার মিশেল ঘটতে পেরেছিল।
- কলা ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি আরবি, সংস্কৃত, ইতিহাস, অর্থনীতি এসব বিভাগও চালু ছিল।
২. প্রথম দিককার শিক্ষক ও গবেষক
মনীষী ও গবেষকরা কলকাতা কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে এখানে যোগ দেন।
- সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ স্থানীয় শিক্ষাবিদের সান্নিধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ অবদান লক্ষ করা যায়।
- বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন কেউ বা ইউরোপ ফেরত, কেউ বা স্থানীয় রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা: শিক্ষা ও আন্দোলন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তো বটেই, জাতীয় আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলন, এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা নানা সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যুতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১. ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
- এখানকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় কারাবরণ থেকে শুরু করে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
- সেই প্রেক্ষাপটে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছিল জাতীয় চেতনার সূতিকাগারে।
২. স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)
- মুক্তিযুদ্ধকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থী সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বা শহীদ হন।
- পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রথম আক্রমণস্থলগুলোর একটি ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও আবাসিক এলাকা (২৫ মার্চ, ১৯৭১)।
- স্বাধীনতার পর জাতি পুনর্গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে—নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাঠামো তৈরিতে।
৩. সামরিক শাসনবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন
- ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত প্রতি আন্দোলন-সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল গণতান্ত্রিক চেতনার প্রাণকেন্দ্র।
- ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
এসব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং জাতীয় ইতিহাস ও স্বাধিকার আন্দোলনের পীঠস্থান হিসেবে দেখা হয়।
বর্তমান কাঠামো ও অনুষদ বিন্যাস
আধুনিক সময়ে (ডিসেম্বর ২০২৪-এর তথ্য অনুসারে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১৩টি অনুষদ ও ৮০টির বেশি বিভাগ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য ইনস্টিটিউট, গবেষণা কেন্দ্র ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
১. অনুষদ (Faculty)
- কলা (Arts)
- বিজ্ঞান (Science)
- ব্যবসায় শিক্ষা (Business Studies)
- সমাজবিজ্ঞান (Social Sciences)
- জীববিজ্ঞান (Biological Sciences)
- ফার্মেসি (Pharmacy)
- আইন (Law)
- স্থাপত্য ও চারুকলা (Fine Arts)
- শিক্ষা (Education)
- ভূগোল ও পরিবেশ (Earth and Environmental Sciences)
- প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (Engineering & Technology) – সীমিত আকারে
- মেডিসিন সংশ্লিষ্ট কিছু পাঠক্রম (সম্ভবত যৌথভাবে পরিচালিত)
- পদার্থবিজ্ঞান-রসায়নীয় ও গণিতবিজ্ঞান (একটি পৃথক হিসাবে দেখা যায় কোথাও কোথাও)
(উপরের তালিকা আনুষ্ঠানিক নয়; বিভাগ ও অনুষদ বিন্যাস সময়ে সময়ে পুনর্গঠিত হয়। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের বিস্তারিত জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন।)
২. ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র
- ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাংগুয়েজ, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (IBA), ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IER)—এসব বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট খ্যাতিমান।
- রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, নজরুল ইনস্টিটিউট, জেন্ডার স্টাডিজ ইনস্টিটিউট প্রভৃতিতে বিশেষায়িত গবেষণা করা হয়।
- বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট উল্লেখযোগ্য।
ভর্তি প্রক্রিয়া ও ভর্তির প্রতিযোগিতা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি—ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, এটা অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আবেদন করে, কিন্তু মোট আসনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ফলে, ভালো প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার দরকার হয়।
১. ভর্তি পরীক্ষার ধরন
- একসময় অনুষদভিত্তিক বা ইউনিটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হতো (KA, KHA, GA, GHA, ইত্যাদি ইউনিট)।
- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু পরিবর্তন এসেছে, যেমন অনলাইন আবেদনের পদ্ধতি, MCQ ও লিখিত পরীক্ষার সংমিশ্রণ, ই-ভালুয়েশন ইত্যাদি।
- বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য—এই তিন শাখায় আলাদা প্রশ্নপত্র থাকে; আবার IBA-তে ভর্তি হতে হলে আলাদা অ্যাপটিটিউড টেস্ট দিতে হয়।
২. প্রস্তুতি ও পরামর্শ
- উচ্চমাধ্যমিকে (HSC) ফল ভালো থাকা জরুরি, কারণ প্রাথমিক বাছাইয়ে ফলের কিছু ওজন (weight) যোগ হয়।
- ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক (যেমন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত বা ব্যবসায়িক বিষয়) প্রশ্ন থাকে।
- বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে পড়লে ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।
৩. ফলাফল ও মেধাতালিকা
- ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত অনলাইনে প্রকাশ পায়।
- যারা উত্তীর্ণ হয়, তাদের বিষয় পছন্দের ভিত্তিতে মেধাতালিকা অনুসারে সীট বরাদ্দ করা হয়।
- একাধিকবার চেষ্টা করার সুযোগ আছে, তবে নির্দিষ্ট শর্তপূরণ করতে হয়।
শিক্ষাকার্যক্রম: স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর
স্নাতক (চার বছর মেয়াদী অনার্স) পাঠক্রমের পাশাপাশি স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স), এমফিল, পিএইচডি পর্যায়ের গবেষণাধর্মী কোর্স চালু রয়েছে। নানা বিষয়ে ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সও পাওয়া যায়।
১. অনার্স ও মাস্টার্স
- অনার্স: সাধারণত আট সেমিস্টারে সম্পন্ন হয় (চার বছর)। বিষয়ভেদে ক্রেডিটের পরিমাণ আলাদা হতে পারে।
- মাস্টার্স: এক বা দুই বছরের কোর্সওয়ার্ক এবং থিসিস বা প্রজেক্ট থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক বিভাগে গ্রুপভিত্তিক গবেষণার ওপর গুরুত্ব থাকে।
২. গবেষণা ও ফান্ডিং
- পিএইচডি প্রোগ্রামে নানা বিষয়ে গবেষণার সুযোগ আছে—বিজ্ঞান, কলা, সমাজবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদিতে।
- ইউজিসি, নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা, অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণা অনুদান (ফান্ড) পাওয়া যায়।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু কেন্দ্র, যেমন “সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস” (CARAS) বিজ্ঞান গবেষণায় সহায়তা করে।
আবাসনব্যবস্থা ও হল সংস্কৃতি
আবাসিক হলগুলো ছাত্রজীবনের বিশেষ অভিজ্ঞতা উপহার দেয়। এগুলোতে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বসবাস করে, যা সমগ্র বাংলাদেশ-সংলগ্ন একটা মাইক্রোকসম তৈরি করে।
১. ছাত্র হল ও ছাত্রী হল
- ঐতিহাসিক হল: যেমন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, জগন্নাথ হল, রত্নগর্ভা রোকেয়া হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজিলাতুননেসা হল ইত্যাদি।
- বেশিরভাগ হলেই ডাইনিং, পাঠাগার, কমনরুম, সাংস্কৃতিক চর্চার স্থান রয়েছে।
- আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব তৈরির পন্থা—হল কাউন্সিল, বিভিন্ন ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
২. হল সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আবহ
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি, বিতর্ক ক্লাব, নাট্যচক্র, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী—এসব হলকেন্দ্রিক সাংগঠনিক পরিবেশে গড়ে ওঠে।
- ইতিবাচক দিক: নেতৃত্ব-দক্ষতা, সামাজিক মেলবন্ধন, সহনশীলতা গড়ে ওঠে।
- নেতিবাচক দিক: কোনো কোনো সময় দলীয় রাজনীতির প্রভাব বা হল দখল-সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি দেখা যায়।
একাডেমিক জীবন ও শিক্ষকদের ভূমিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জীবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বরাবরই গুরুত্ত্বপূর্ণ। এখানে কিছু অনুষদে গবেষণার সুযোগ যেমন ভালো, তেমনি কিছু বিভাগের অবকাঠামোগত সংকটও থাকতে পারে।
১. শ্রেণিকক্ষ ও পাঠদান পদ্ধতি
- অনেক বিভাগে লেকচার, সেমিনার, প্রেজেন্টেশন, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের সমন্বয়ে পাঠদান হয়।
- শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া, গ্রুপ ডিসকাশন, ডিজিটাল লাইব্রেরি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
- শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছাড়াও বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ফিল্ডওয়ার্কে অংশ নেয়।
২. পরীক্ষার ধরন
- সেমিস্টার সিস্টেম বা বার্ষিক সিস্টেম—দুটি পদ্ধতিই এখানে বিদ্যমান, তবে বেশিরভাগ বিভাগে সেমিস্টার ভিত্তিক পরীক্ষা প্রচলিত হচ্ছে।
- ল্যাববেইজড বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে নিয়মিত প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ও রিপোর্ট জমা দিতে হয়।
- অনেক বিষয়েই Viva Voce বা মৌখিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।
৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মেলবন্ধন
- শিক্ষকগণ ক্লাস ও গবেষণার পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনা, নীতি নির্ধারণ, রাষ্ট্রের নানা কাজে পরামর্শক হিসেবেও যুক্ত আছেন।
- শিক্ষার্থীদের পক্ষে ওপেন-ডোর পলিসি আছে—সরাসরি শিক্ষকের কাছে গিয়ে আলোচনা করা, থিসিস বিষয় নিয়ে আলাপ ইত্যাদি সহজলভ্য।
- ব্যক্তিগত মেন্টরিং ব্যবস্থা কখনো কখনো বিভাগভেদে চালু রয়েছে।
সহপাঠ কার্যক্রম ও ক্লাব
শুধু পড়ালেখা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একাধিক ক্লাব, সংগঠন, সমাজ—এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে যুক্ত হয়।
১. ক্লাবগুলোর বৈচিত্র্য
- ডিবেটিং সোসাইটি: বিতর্কচর্চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য শক্তিশালী।
- কালচারাল ক্লাব: নাটক, গান, নৃত্য, আলোকচিত্র প্রভৃতিতে নিয়মিত ইভেন্ট আয়োজিত হয়।
- সায়েন্স ক্লাব: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলাসহ বিভিন্ন ওয়ার্কশপ আয়োজন করে।
- স্পোর্টস ক্লাব: ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, অ্যাথলেটিকস—সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করে।
- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন: রক্তদান, কমিউনিটি সার্ভিস, ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
২. কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি
- এসব ক্লাব ও সংগঠনে যোগ দিলে পরিকল্পনা, নেতৃত্ব, অনুষ্ঠান আয়োজন, ফান্ড সংগ্রহ—ইত্যাদি বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করা যায়।
- ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতেও ক্লাব কার্যক্রম সহায়ক হয়।
- সহপাঠ কার্যক্রম থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা অনেক সময় চাকরি বা উচ্চতর শিক্ষার স্কলারশিপ আবেদনে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে গণ্য হয়।
পাঠাগার ও গবেষণা সুবিধা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি—যা “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার” নামে পরিচিত—এটি দেশের সবচেয়ে বড় একাডেমিক লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে একটি। ডিজিটাল রিসোর্স, অসংখ্য বই, জার্নাল ও পাণ্ডুলিপি এখানে সংরক্ষিত রয়েছে।
১. কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
- প্রায় ৬ লক্ষেরও বেশি বই এবং হাজার হাজার জার্নাল সংরক্ষিত আছে।
- ডিজিটাল ক্যাটালগ, ই-লাইব্রেরি ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যেখানে Springer, JSTOR, IEEE ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ডাটাবেসে প্রবেশাধিকার আছে।
- পাঠাগারে নিরিবিলি পাঠকক্ষ, গবেষণা কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব ইত্যাদি রয়েছে।
২. বিভাগীয় গ্রন্থাগার
- প্রতিটি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ছোট গ্রন্থাগার থাকে, যেখানে বিষয়ভিত্তিক বই ও সাময়িকী থাকে।
- অনেক বিভাগ গবেষণার জন্য রেফারেন্স বই, থিসিস পেপার, প্রজেক্ট রিপোর্ট সহায়তা সরবরাহ করে।
৩ গবেষণা প্রকাশনা
- শিক্ষকদের নিজস্ব গবেষণাপত্র, সম্মেলন উপস্থাপনা (conference proceedings), আন্তর্জাতিক জার্নালে পাবলিকেশন—এসবকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী প্রকাশনা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
- শিক্ষার্থীরাও গাইডেন্স পেলে Undergraduate ও Masters পর্যায়ে ছোট গবেষণাকর্ম প্রকাশ করতে পারেন।
ছাত্র রাজনীতি ও সংস্কৃতি
দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এই বিশ্ববিদ্যালয় মূলত জাতীয় রাজনীতির সূতিকাগার বলেই পরিচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই দেখা যায়।
১. ইতিবাচক দিক
- গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা: সমবয়সে নেতৃত্ব, সংগঠনের কৌশল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি শেখা যায়।
- অতীতের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম—এসব থেকেই আজকের প্রজন্ম অনুপ্রেরণা নেয়।
- সামাজিক ও মানবিক ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা সোচ্চার, যেমন বন্যার্তদের সহায়তা, স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম।
২. নেতিবাচক দিক
- দলীয় প্রভাব, হল দখল, সহিংসতার প্রবণতা—এসব কখনো কখনো একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্নিত করে।
- কখনো কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহার হয়ে থাকে।
- তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সহিংসতা কিছুটা কমেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব ও পরিচিতি
বাংলাদেশের ইতিহাস, সামাজিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বিকাশে এই বিশ্ববিদ্যালয় যে অপরিহার্য অবদান রেখেছে, তা জোর দিয়েই বলা যায়। এখানে শেখা ও গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হয়—সেই ধারাবাহিকতায় এই বিদ্যাপীঠকে একটা আদি বাতিঘর হিসেবে দেখা হয়।
১. আন্তর্জাতিক পরিচিতি
- দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে এর নামডাক আছে।
- বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশের পুরোনো শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে স্থান পায়।
- বিদেশি শিক্ষার্থীও কিছু বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান (বিশেষ করে ভাষা শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অধ্যয়ন ইত্যাদিতে)।
২. অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক
- বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অসংখ্য গ্র্যাজুয়েট এখন জাতীয় সংসদ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা ও গবেষণা, সিভিল সার্ভিস, শিল্প ও সংস্কৃতি—নানা ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করছেন।
- বাংলাদেশসহ বিদেশে বসবাসকারী প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নানা সংঘ বা নেটওয়ার্ক আছে, যেখানে তারা চাকরি, স্কলারশিপ, গবেষণা প্রবন্ধ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদান-প্রদান করে।
সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২০-এর দশক থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন ক্লাস, ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন ইত্যাদির দিকে জোর দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট চালুর পাশাপাশি গবেষণামুখিতা বাড়াতে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১. ডিজিটাল রূপান্তর
- অনলাইন ভর্তি আবেদন, ই-লাইব্রেরি, ডিজিটাল আইডি কার্ড—এসব এখন বাস্তবায়িত।
- কোভিড-পরবর্তী সময়ে লেকচারগুলো অনেকটাই অনলাইনের মাধ্যমে বিকল্প ক্লাস আকারে নেয়া হচ্ছে।
- গবেষকদের জন্য অনলাইনে আন্তর্জাতিক জার্নাল অ্যাক্সেস বৃদ্ধি পেয়েছে।
২. ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ
- শহরের কেন্দ্রে জায়গা স্বল্পতার কারণে ঢাকার আশপাশে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
- সাভার ও কেরাণীগঞ্জ এলাকায় কিছু জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নতুন ভবন ও গবেষণা কেন্দ্র তৈরির চিন্তা চলছে (তবে এটি এখনো প্রস্তাবিত পর্যায়ে)।
৩. আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব
- বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে।
- ইউরোপিয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় পড়াশোনা-গবেষণা বাড়াতে নানা প্রকল্প চলমান।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাফল্যগাথা
পন্ডিত, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সাফল্যের তালিকা বিশাল। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম:
- ড. মুহাম্মদ ইউনুস: গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, শান্তিতে নোবেলজয়ী—অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাপ-সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
- ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম: সংবিধান প্রণয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
- হুমায়ূন আহমেদ: বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক, রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করতেন।
এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, সচিব, রাষ্ট্রদূত, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়—সর্বক্ষেত্রেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের পদচারণা লক্ষণীয়।
পর্যটন ও ক্যাম্পাস ভ্রমণ
ঢাকা শহরে বেড়াতে এলে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুঁ মারেন। ঐতিহ্যবাহী ভবন, সবুজ চত্বর, মুক্ত আকাশের নিচে তরুণদের আড্ডা—সব মিলিয়ে এখানে একটা সরগরম যুবকীয় পরিবেশ দেখা যায়।
১. দর্শনীয় স্থাপনা
- কার্জন হল: স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন। মূলত বিজ্ঞান অনুষদ ও কিছু বিভাগের ক্লাস হয় এখানে।
- টিএসসি (Teacher-Student Centre): সংস্কৃতি ও আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু। বইমেলা, নাট্যমঞ্চ, ফিল্ম ক্লাব ইত্যাদির কার্যক্রম চলে।
- স্মৃতিচিহ্ন: একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক প্রভৃতি অন্যতম ঐতিহাসিক চিহ্ন।
২. ক্যাম্পাস আড্ডা ও সামাজিক উৎসব
- বৈশাখী উৎসব: পহেলা বৈশাখে চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা দেশের সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান অধিকার করে।
- পহেলা ফাল্গুন, বসন্ত উৎসব, বিজয় দিবস—এসব উপলক্ষে ক্যাম্পাস নানান রঙে সেজে ওঠে।
- শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রধান স্পট: টিএসসি, কলাভবন চত্বর, দোয়েল চত্বর, অপরাজেয় বাংলা প্রাঙ্গণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য করণীয় ও চ্যালেঞ্জ
এত ঐতিহ্য ও গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও ঢাবিকে ভবিষ্যতে আরও কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে, যাতে বিশ্বমানে প্রতিযোগিতা করা যায়।
১. অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ
- ক্যাম্পাস জুড়ে ভবন সংকট, আধুনিক ল্যাবের অভাব বা পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের স্বল্পতা দেখা যায়।
- অত্যাধুনিক ল্যাব, ডিজিটাল সরঞ্জাম, বড় বড় অডিটোরিয়াম তৈরির প্রয়োজন বাড়ছে।
২. একাডেমিক মানোন্নয়ন
- কিছু বিভাগের পাঠ্যক্রম (Curriculum) যুগোপযোগী করা দরকার।
- গবেষণার সুযোগ ও আন্তর্জাতিকভাবে পাবলিকেশন বৃদ্ধিতে ফান্ড ও সুগঠিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
৩. প্রশাসনিক কাঠামো
- কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো ডিজিটাল করে দ্রুত সেবা দেওয়া—এটি সময়ের দাবি।
- নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভর্তি, ফল প্রকাশ—সর্বত্র স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা দরকার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ১ জুলাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কে?
মূলত ব্রিটিশ সরকার ও স্থানীয় অভিজাত (নবাব পরিবার) মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন লর্ড রোনাল্ডশ্য, নবাব সলিমুল্লাহ, স্যার ফিলিপ হার্টগ প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত?
ঢাকার রমনা এলাকায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শাহবাগের মধ্যবর্তী অংশে বিস্তৃত এর প্রধান ক্যাম্পাস। নীলক্ষেত, টিএসসি—এসব পরিচিত স্থান দিয়েও ঘিরে আছে ক্যাম্পাস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন?
অনুষদ বা ইউনিটভেদে প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজিত হয়। অনলাইনে আবেদন করতে হয়, তারপর MCQ ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাতালিকা অনুযায়ী বিভাগ বরাদ্দ হয়।
কতগুলো অনুষদ আছে?
বর্তমানে (ডিসেম্বর ২০২৪ অনুযায়ী) প্রায় ১৩টি অনুষদ ও ৮০টির বেশি বিভাগ চালু রয়েছে। তবে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ফলে সংখ্যা কিছুটা রদবদল হতে পারে।
কোন বিভাগ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়?
বিজ্ঞান, কলা, ব্যবসায় শিক্ষা (বাণিজ্য), আইন—এসব সাধারণত উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন, তবে প্রকৃত জনপ্রিয়তা নির্ভর করে শ্রমবাজার ও সময়ের প্রেক্ষাপটে।
আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্বের নামকরা র্যাঙ্কিং যেমন QS World University Rankings বা Times Higher Education Ranking-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পিছিয়ে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক তালিকায় ঐতিহ্যগত কারণে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ধরে রেখেছে।
১. পরিকল্পনা ও কৌশল
- গবেষণা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো দরকার।
- শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন, সম্মেলনে অংশগ্রহণ—এসব আরও ফলপ্রসূ করতে হবে।
- শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ই-লার্নিং, অনলাইন লাইব্রেরি বিকাশ ঘটানো জরুরি।
২. তরুণদের ভূমিকা
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরা যদি প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ, সামাজিক উদ্যোগে বেশি সম্পৃক্ত হয়, তবে সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি বাড়বে। এর সুফল পাবে দেশও।
আরও পড়ুন: কারমাইকেল কলেজ : ইতিহাস, শিক্ষা কার্যক্রম এবং ক্যাম্পাস জীবন
উপসংহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়—এটি বাঙালি জাতিসত্তা, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক চেতনার জন্মভূমি। ১৯২১ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ প্রায় শতবর্ষ পেরিয়ে নতুন যুগে পদার্পণ করেছে। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এর শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল ও বিশ্বায়নের যুগে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার কাটতি থেকে শুরু করে অনুষদ ও বিভাগের বৈচিত্র্য, গবেষণার পরিসর, হল ও ক্যাম্পাস সংস্কৃতি—সব মিলে এটি এক রঙিন ছোট সমাজ, যেখানে রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি—সবকিছু এক ধাপ এগিয়ে থাকার চেষ্টা করে। ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যায়, বড় বড় রাষ্ট্রনায়ক, গুণীজন ও গবেষক এই বিদ্যাপীঠের হাত ধরেই উঠে এসেছেন।
অতএব, যদি আপনি এখানকার শিক্ষার্থী হতে চান অথবা শুধুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ রাখেন, আশা করছি এই দীর্ঘ নিবন্ধ আপনাকে পর্যাপ্ত ধারণা দিয়েছে। গত এক শতকে যে সংগ্রাম, অর্জন ও নেতৃত্ব তৈরি করেছে এই প্রতিষ্ঠান, ভবিষ্যতেও তা বহুগুণ সম্প্রসারিত হবে—এমনটিই কাম্য। বাংলাদেশের ভৌগোলিক কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার বিশাল ঐতিহ্য ও সুনাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য, জাতির জন্য এবং বিশ্বের বুকে আলোকবর্তিকা হিসেবে অগ্রসর হোক—এই আমাদের প্রত্যাশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচে মন্তব্য করুন। পোস্টটি যদি তথ্যবহুল মনে হয়, তবে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!