মাসনুন দোয়া : দৈনন্দিন জীবনের জন্য নির্বাচিত দোয়া, ফজিলত ও আমলের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা

mybdhelp.com-মাসনুন দোয়া
ছবি : MyBdhelp গ্রাফিক্স

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, ইবাদতের মগজ এবং আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। আর সেই দোয়া যদি হয় স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক শেখানো ও আমলকৃত, তবে তার গুরুত্ব ও কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এগুলোই ‘মাসনুন দোয়া’ নামে পরিচিত। এই প্রবন্ধে আমরা মাসনুন দোয়ার পরিচয়, এর অপরিমেয় গুরুত্ব ও ফজিলত, দোয়া কবুলের শর্তাবলী ও আদব, বিশেষ সময়সমূহ এবং দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বিশেষ মুহূর্তের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মাসনুন দোয়া, তাদের অর্থ ও আমলের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। উদ্দেশ্য হলো, এই বরকতময় দোয়াগুলোকে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা।

এই নিবন্ধে যা জানব

মাসনুন দোয়া কী? পরিচিতি ও তাৎপর্য

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া প্রতিটি মুমিনের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই দোয়ার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হলো প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর শেখানো পদ্ধতি ও ভাষায় দোয়া করা, যা ‘মাসনুন দোয়া’ হিসেবে পরিচিত। এর পরিচিতি ও তাৎপর্য অনুধাবন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।

ক. ‘মাসনুন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ও ‘দোয়া’র পারিভাষিক সংজ্ঞা

‘মাসনুন’ (مَسْنُون) শব্দটি আরবি ‘সুন্নাহ’ (سُنَّة) থেকে উদ্ভূত। ‘সুন্নাহ’ অর্থ হলো পথ, পদ্ধতি বা রীতি। ইসলামী পরিভাষায় ‘সুন্নাহ’ বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথা, কাজ, অনুমোদন এবং তাঁর চারিত্রিক ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহকে বোঝানো হয়। সুতরাং, ‘মাসনুন’ অর্থ হলো সুন্নাহসম্মত, অর্থাৎ যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত।

‘দোয়া’ (دُعَاء) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ডাকা, আহ্বান করা, কোনো কিছু চাওয়া বা প্রার্থনা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, ‘দোয়া’ হলো বিনয় ও নম্রতার সাথে মহান আল্লাহর দরবারে নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য, কল্যাণ লাভের জন্য অথবা তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তনের উদ্দেশ্যে আবেদন নিবেদন করা। দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত।

অতএব, ‘মাসনুন দোয়া’ বলতে সেই সকল দোয়াকে বোঝায় যা পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, অর্থাৎ যা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা শিখিয়েছেন অথবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে পাঠ করেছেন, পাঠ করতে উৎসাহিত করেছেন বা অনুমোদন দিয়েছেন।

খ. মাসনুন দোয়ার বৈশিষ্ট্য: কেন এগুলো স্বতন্ত্র?

মাসনুন দোয়াগুলো অন্যান্য সাধারণ দোয়া থেকে বিভিন্ন কারণে স্বতন্ত্র ও অধিক মর্যাদাপূর্ণ:

  • i. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক নির্দেশিত, আমলকৃত বা অনুমোদিত দোয়া: মাসনুন দোয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এগুলোর উৎস স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। তিনি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ, তাঁর প্রতিটি কথাই ওহীর নির্দেশনার কাছাকাছি। তাই তাঁর শেখানো দোয়ায় ভুলত্রুটির অবকাশ নেই এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়।
  • ii. শব্দচয়ন ও ভাবের গভীরতা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেওয়া হয়েছিল ‘জাওয়ামিউল কালিম’ অর্থাৎ অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থ প্রকাশের ক্ষমতা। মাসনুন দোয়াগুলোতে ব্যবহৃত শব্দমালা অত্যন্ত প্রাঞ্জল, অর্থবহ এবং গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। এগুলো অল্প কথায় দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত কল্যাণ প্রার্থনাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
  • iii. দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের সমন্বয়: মাসনুন দোয়াগুলোতে শুধু পার্থিব প্রয়োজন পূরণের আবেদনই থাকে না, বরং পরকালীন মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রার্থনাও বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। এটি মুমিনের জীবনের ভারসাম্যপূর্ণ চাহিদার প্রতিফলন।

গ. সাধারণ দোয়া বনাম মাসনুন দোয়ার মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য

একজন মুমিন যেকোনো ভাষায়, যেকোনো প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে নিজের মতো করে দোয়া করতে পারেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই দোয়ায় শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু না থাকে। এটি হলো সাধারণ দোয়া। সাধারণ দোয়ারও গুরুত্ব রয়েছে এবং আল্লাহ তা কবুল করতে পারেন।

অন্যদিকে, মাসনুন দোয়া হলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যে পঠিত দোয়া। মাসনুন দোয়া পাঠের মাধ্যমে একদিকে যেমন সুন্নাহ অনুসরণের অতিরিক্ত সওয়াব লাভ হয়, তেমনি আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। কারণ, নবী (ﷺ) আল্লাহর পছন্দনীয় শব্দ ও বাক্যেই দোয়া করতে শিখিয়েছেন। তাই, কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য বা পরিস্থিতিতে যদি মাসনুন দোয়া বর্ণিত থাকে, তবে সেটি পাঠ করাই উত্তম। তবে মাসনুন দোয়া জানা না থাকলে নিজের ভাষায় দোয়া করতে কোনো বাধা নেই।

ঘ. মাসনুন দোয়ার প্রধান উৎস: পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিস

মাসনুন দোয়ার প্রধান এবং নির্ভরযোগ্য উৎস দুটি:

  1. পবিত্র কুরআন: কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তা’আলা দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অনেক সুন্দর দোয়া শিখিয়েছেন, যা বিভিন্ন নবী-রাসূলগণ (আঃ) করেছিলেন। যেমন, হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-এর তওবার দোয়া (সূরা আ’রাফ: ২৩), হযরত ইউনুস (আঃ)-এর বিপদের দোয়া (সূরা আম্বিয়া: ৮৭) ইত্যাদি।
  2. সহীহ হাদিস: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদিসের বিশাল ভান্ডারে অসংখ্য মাসনুন দোয়া সংরক্ষিত আছে। সিহাহ সিত্তাহ (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) সহ অন্যান্য নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রন্থে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য দোয়া সংকলিত হয়েছে। এক্ষেত্রে দোয়ার বিশুদ্ধতা ও হাদিসের সনদ যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাসনুন দোয়ার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা মুমিনের জীবনে

মাসনুন দোয়া মুমিনের জীবনে শুধুমাত্র কিছু প্রার্থনার সমষ্টি নয়, বরং এটি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, সুন্নাহর অনুসরণ এবং সার্বিক কল্যাণ লাভের এক শক্তিশালী মাধ্যম। এর গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা নিম্নে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

ক. আল্লাহর নির্দেশ পালন:

“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব” দোয়া করা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ। তিনি পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: “وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ” অর্থাৎ, “তোমাদের রব বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত (দোয়া) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে’।” (সূরা গাফির: ৬০)। মাসনুন দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর এই নির্দেশ কার্যকরভাবে পালন করতে পারি।  

খ. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহর অনুসরণ ও ভালোবাসা অর্জন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এবং আল্লাহর ভালোবাসা লাভের পূর্বশর্ত। আল্লাহ তা’আলা বলেন: “قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ” অর্থাৎ, “বলো, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১)। মাসনুন দোয়াগুলো রাসূল (ﷺ)-এর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। সেগুলো পাঠ ও আমলের মাধ্যমে তাঁর সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ করা হয় এবং আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।  

গ. আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম সেরা মাধ্যম

দোয়াকে হাদিসে ‘ইবাদতের মগজ’ (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ – তিরমিযী) এবং ‘দোয়াই ইবাদত’ (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ – তিরমিযী) বলা হয়েছে। বান্দা যখন আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করে, তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। মাসনুন দোয়া, যা আল্লাহর শেখানো ও রাসূল (ﷺ)-এর নির্বাচিত ভাষায় হয়, তা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের এক পরীক্ষিত ও সর্বোত্তম মাধ্যম।

ঘ. বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে সুরক্ষা ও প্রতিকারের উপায়

মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ আসা স্বাভাবিক। এসব থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য দোয়ার চেয়ে শক্তিশালী কোনো হাতিয়ার নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তাকদীরকে দোয়া ব্যতীত আর কিছুই পরিবর্তন করতে পারে না।” (তিরমিযী)। মাসনুন দোয়াগুলো বিভিন্ন বিপদাপদ, রোগব্যাধি, শয়তানের অনিষ্ট এবং যাবতীয় অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সর্বোত্তম উপায়। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে সুরক্ষিত রাখেন এবং পতিত বিপদ থেকেও উদ্ধার করেন।

ঙ. মানসিক শান্তি, আত্মিক প্রশান্তি ও দৃঢ়তা অর্জনের চাবিকাঠি

বর্তমান বস্তুবাদী যুগে মানুষ নানা ধরনের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও অস্থিরতায় ভোগে। আল্লাহর স্মরণের মধ্যেই রয়েছে হৃদয়ের প্রশান্তি। আল্লাহ বলেন: “الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ” অর্থাৎ, “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর স্মরণে শান্তি লাভ করে; হ্যাঁ, জেনে রেখো, একমাত্র আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি খুঁজে পায়।” (সূরা রা’দ: ২৮)। মাসনুন দোয়াগুলো আল্লাহর সর্বোত্তম জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো পাঠের মাধ্যমে অন্তরে ঈমানী শক্তি ও মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায় এবং অনাবিল প্রশান্তি অর্জিত হয়।

চ. দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে বরকত ও আল্লাহর সাহায্য লাভ

ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য মাসনুন দোয়া রয়েছে। যেমন – খাওয়া, পান করা, পোশাক পরা, ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়া, বাজারে যাওয়া ইত্যাদি। এই দোয়াগুলো পাঠের মাধ্যমে প্রতিটি কাজে আল্লাহর স্মরণ করা হয়, ফলে সেই কাজে বরকত (প্রাচুর্য ও কল্যাণ) লাভ হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্য ও সুরক্ষা পাওয়া যায়।

দোয়া কবুলের প্রধান আদব ও অবশ্য পূরণীয় শর্তাবলী

দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদব ও শর্ত রয়েছে, যা পালন করা অত্যাবশ্যক। এগুলো ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বৃথা। নিম্নে প্রধান আদব ও শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

ক. ইখলাস বা একনিষ্ঠতা: শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা

দোয়া কবুলের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান শর্ত হলো ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। অর্থাৎ, দোয়া করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, অন্য কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ, লোকদেখানো বা সুনাম অর্জনের জন্য নয়। অন্তরে এই বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই সকল প্রয়োজন পূরণকারী ও বিপদ থেকে উদ্ধারকারী।

খ. হারাম উপার্জন, খাদ্য ও পানীয় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা

হারাম উপার্জন, হারাম খাদ্য ও পানীয় দোয়া কবুলের পথে প্রধান অন্তরায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, যে দীর্ঘ সফর করে ক্লান্ত ও ধূলিমলিন অবস্থায় আকাশের দিকে হাত তুলে ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ বলে দোয়া করে, অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারাই প্রতিপালিত। অতঃপর তিনি বলেন, “তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?” (সহীহ মুসলিম)। তাই দোয়া কবুল হওয়ার জন্য হালাল রুজি ও পবিত্র জীবনযাপন অপরিহার্য।

গ. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস ও ইয়াকিন (দৃঢ় প্রত্যয়) রাখা

দোয়া করার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি অবশ্যই দোয়া শুনছেন এবং তিনি তা কবুল করতে সক্ষম। মনে কোনো প্রকার সন্দেহ বা সংশয় রাখা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো।” (তিরমিযী)।

ঘ. দোয়ায় তাড়াহুড়ো না করা এবং কবুল হওয়ার ব্যাপারে হতাশ না হওয়া

দোয়া করার পর কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করা বা অধৈর্য হয়ে পড়া উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয়, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে বলে যে, ‘আমি তো দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া কবুল হলো না’।” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রজ্ঞা অনুযায়ী দোয়া কবুল করেন। কখনও তাৎক্ষণিকভাবে কবুল করেন, কখনও দেরিতে কবুল করেন, কখনও দোয়ার বিনিময়ে কোনো বিপদ দূর করে দেন অথবা কখনও তা আখিরাতের জন্য জমা রাখেন। তাই হতাশ না হয়ে দোয়া চালিয়ে যেতে হবে।

ঙ. বিনয়, নম্রতা, ভয় ও একাগ্রতার সাথে দোয়া করা

আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে অত্যন্ত বিনয়, নম্রতা, ভয় ও একাগ্রতার সাথে। অহংকার বা অমনোযোগী অবস্থায় দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার আশা কম থাকে। দোয়ার সময় নিজের হীনতা ও আল্লাহর মহত্ত্বের কথা স্মরণ করতে হবে। সম্ভব হলে কান্নাকাটি করা বা কান্নার ভাব তৈরি করা উত্তম।

চ. সম্ভব হলে ওযু অবস্থায় ও ক্বিবলামুখী হয়ে দোয়া করা

ওযু অবস্থায় এবং ক্বিবলার দিকে মুখ করে দোয়া করা দোয়া কবুলের অন্যতম আদব। যদিও এটি অপরিহার্য শর্ত নয়, তবে এর মাধ্যমে দোয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ প্রয়োজনে যেকোনো অবস্থায় দোয়া করা যায়।

ছ. দোয়ার শুরুতে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা এবং রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করা ও শেষেও দরুদ পাঠ করা

দোয়া শুরু করার পূর্বে আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) ও সানা (গুণকীর্তন) করা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করা দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ আদব। হযরত ফুদালাহ ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ব্যক্তিকে নামাজে তাড়াহুড়ো করে দোয়া করতে শুনলেন, সে আল্লাহর প্রশংসা করলো না এবং নবীর (ﷺ) উপর দরুদও পাঠ করলো না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “এই লোকটি তাড়াহুড়ো করেছে।” অতঃপর তিনি তাকে ডেকে বললেন, “যখন তোমাদের কেউ দোয়া করবে, তখন সে যেন প্রথমে তার মহান রবের প্রশংসা ও গুণগান করে, অতঃপর নবীর (ﷺ) উপর দরুদ পাঠ করে, তারপর যা ইচ্ছা দোয়া করে।” (তিরমিযী, আবু দাউদ)। দোয়ার শেষেও দরুদ পাঠ করা উত্তম।

জ. নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা

দোয়ার পূর্বে নিজের জানা-অজানা পাপ ও ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। পাপ দোয়া কবুলের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে অন্তর পরিষ্কার হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভের উপযুক্ত হয়।

ঝ. দোয়ায় صدای স্বর নিচু রাখা

আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন, “তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো বিনীতভাবে ও গোপনে।” (সূরা আ’রাফ: ৫৫)। তাই চিৎকার করে বা উচ্চস্বরে দোয়া না করে মাঝারি বা নিচু স্বরে দোয়া করাই উত্তম। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরের তারতম্য হতে পারে।

দোয়া কবুলের বিশেষ সময়, স্থান ও অবস্থা

কিছু বিশেষ সময়, স্থান এবং অবস্থা রয়েছে যখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। মুমিনদের উচিত এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।

ক. রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বা তাহাজ্জুদের সময়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “আমাদের রব আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন: কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব? কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। এটি দোয়া কবুলের সর্বোত্তম সময়।

খ. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (অর্থাৎ কবুল হয়)।” (তিরমিযী, আবু দাউদ)। তাই আযানের পর ইকামতের আগে দোয়া করার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

গ. ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর পঠিতব্য দোয়াসমূহ

ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন সময়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? তিনি বললেন, “শেষ রাতের নীরবতায় এবং অবশ্যপালনীয় সালাতসমূহের সমাপ্তিতে।” (তিরমিযী)।

ঘ. জুমু’আর দিনের বিশেষ মুহূর্ত

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুমু’আর দিনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “এতে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলমান বান্দা দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণের দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন।” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। এই মুহূর্তটি কখন, তা নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের ব্যাপারে অনেক আলেম মত দিয়েছেন।

ঙ. সিজদা অবস্থায়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সিজদা অবস্থায়। সুতরাং তোমরা সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।” (সহীহ মুসলিম)। সিজদায় নিজের ভাষায় আরবিতে দোয়া করা উত্তম, তবে আরবি না জানলে মাসনুন দোয়া জানা থাকলে তা পাঠ করা যেতে পারে।

চ. লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনীতে

কুরআনে লাইলাতুল কদরকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। এই রাতে দোয়া ও ইবাদত কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই রাতে পাঠ করার জন্য আয়েশা (রাঃ)-কে একটি বিশেষ প্রার্থনা শিখিয়েছিলেন: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী” অর্থ: “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা আপনার পছন্দ, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।”

ছ. আরাফাতের ময়দানে হজ্জের দিন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফাতের দিনের দোয়া।” (তিরমিযী)। হজ্জের সময় আরাফাতের ময়দানে হাজীগণ যে দোয়া করেন, তা কবুল হয়।

জ. বৃষ্টি বর্ষণের সময়

বৃষ্টি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন। যখন বৃষ্টি হয়, তখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত, “দু’টি সময়ের দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না: আযানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।” (আবু দাউদ, হাকিম)।

ঝ. জমজমের পানি পান করার সময়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জমজমের পানি যে নিয়তে পান করা হবে, তা-ই অর্জিত হবে।” (ইবনে মাজাহ, আহমদ)। তাই জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করা উচিত।

ঞ. অসুস্থ অবস্থায় এবং রোজাদার অবস্থায় ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে

অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া এবং রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের পূর্ব মুহূর্তের দোয়া আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তাই এই সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

দৈনন্দিন জীবনের জন্য নির্বাচিত ও অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসনুন দোয়া (অর্থসহ)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের শুরুতে ও শেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন। এই দোয়াগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর স্মরণ ও সুরক্ষার মধ্যে থাকতে পারি। নিচে কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া উল্লেখ করা হলো (সম্পূর্ণ আর্টিকেলে প্রতিটি দোয়ার আরবি, উচ্চারণ, অর্থ ও সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে):

ক. ঘুম থেকে ওঠার পরের দোয়া

  • আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
  • বাংলা উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না বা’দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর।
  • বাংলা অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর জীবন দান করেছেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান।

খ. ঘুমানোর পূর্বের দোয়া (আয়াতুল কুরসি, তিন কুল, ঘুমের বিশেষ দোয়া)

  • বিশেষ দোয়া আরবি: اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
  • বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া।
  • বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি মৃত্যুবরণ করি (ঘুমানো) এবং তোমার নামেই জীবিত হই (জাগ্রত হওয়া)।

গ. খাবার শুরু করার দোয়া ও খাবার শেষের দোয়া

  • শুরুর দোয়া আরবি: بِسْمِ اللَّهِ (বিসমিল্লাহ্) / اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيمَا رَزَقْتَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (শুরুতে ভুলে গেলে: بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ)
  • শেষের দোয়া আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ

ঘ. পোশাক পরিধান করার দোয়া ও খোলার দোয়া

পোশাক পরিধান করা ও খোলার ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া শিখিয়েছেন, যা আমাদের আল্লাহর স্মরণ রাখতে এবং তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে সাহায্য করে।

পোশাক পরিধান করার দোয়া:

নতুন পোশাক পরিধানের সময়:

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, তখন সেটির নাম নিতেন, তা পাগড়ি হোক বা জামা বা চাদর হোক। এরপর তিনি বলতেন:

“আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা কাসাওতানীহি, আসআলুকা মিন খাইরিহি ওয়া খাইরি মা সুনিয়া লাহূ, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনিয়া লাহূ।”

অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনারই, আপনিই আমাকে এই পোশাক দান করেছেন। আমি এর মঙ্গল ও যে উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত, তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর অমঙ্গল ও যে কারণে এটি তৈরি, তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।” (সুনান আবু দাউদ-৪০২০, সুনান আত-তিরমিযী)

সাধারণ পোশাক পরিধানের সময়:

আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا (الثَّوْبَ) وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ

বাংলা উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা (স্সাওবা) ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ।

বাংলা অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই (পোশাক) পরিয়েছেন এবং আমার কোনো ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই আমাকে এটি দান করেছেন। (সুনান আবু দাউদ, সুনান ইবনে মাজাহ)

পোশাক খোলার দোয়া:

পোশাক খোলার সময় বিশেষভাবে কোনো নির্দিষ্ট দোয়া বর্ণিত না থাকলেও, বিদ্বানগণ বলেন যে, পোশাক খোলার পূর্বে “বিসমিল্লাহ” (আল্লাহর নামে) বলা উচিত। এর কারণ হলো, দুর্বল সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে যে, যখন কোনো ব্যক্তি পোশাক খোলে এবং “বিসমিল্লাহ” বলে, তখন জিনদের দৃষ্টি থেকে তার লজ্জাস্থান আবৃত থাকে।

আরবি: بِسْمِ اللَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হ।

বাংলা অর্থ: আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।

পোশাক পরিধান ও খোলার সময় এই দোয়াগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এবং তাঁর সাহায্য ও সুরক্ষা কামনা করি। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক হয়।

ঙ. শৌচাগারে (টয়লেটে) প্রবেশ করার দোয়া ও বের হওয়ার দোয়া

শৌচাগার এমন একটি স্থান যেখানে সাধারণত অপবিত্রতা থাকে। তাই, এই স্থানে প্রবেশের পূর্বে এবং বের হওয়ার পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া শিখিয়েছেন।

শৌচাগারে (টয়লেটে) প্রবেশ করার দোয়া:

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-য়িছ।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট পুরুষ ও নারী জিনদের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৪২; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৭৫)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন শৌচাগারে প্রবেশ করতেন, তখন এই দোয়া পাঠ করতেন। ‘খুবুছ’ অর্থ পুরুষ জিন এবং ‘খাবা-য়িছ’ অর্থ নারী জিন। এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা জিনদের অনিষ্ট ও খারাপ প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চাই।

শৌচাগার (টয়লেট) থেকে বের হওয়ার দোয়া:

আরবি: غُفْرَانَكَ

বাংলা উচ্চারণ: গুফ্রা-নাকা।

বাংলা অর্থ: আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (সুনান আত-তিরমিযী, হাদিস নং ৭; সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৩০)

চ. গৃহে প্রবেশের ও প্রস্থানকালে পঠিতব্য দোয়া

ঘর মানুষের আশ্রয়স্থল এবং শান্তির নীড়। ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় কিছু মাসনুন দোয়া পাঠ করা সুন্নত, যা আমাদের আল্লাহর স্মরণে রাখে এবং তাঁর রহমত ও বরকত লাভে সহায়ক হয়।

ঘরে প্রবেশ করার দোয়া:

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا  

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাল মাওলিজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা ওয়া বিসমিল্লা-হি খারাজনা ওয়া আলাল্লা-হি রব্বিনা তাওয়াক্কালনা।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উত্তম প্রবেশ এবং উত্তম প্রস্থান কামনা করি। আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করলাম এবং আল্লাহর নামে আমরা বের হলাম। আর আমাদের রব আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করলাম। (সুনান আবু দাউদ)

অন্যান্য বর্ণনা: ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়াও সুন্নত, যদি ঘরে কেউ থাকে। আর যদি কেউ না থাকে, তবে নিজের উপর সালাম বলা: “السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين” (আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন) – আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া:

আরবি: بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু আলাল্লা-হি লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।

বাংলা অর্থ: আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি), আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ব্যতীত কোনো সাহায্যকারী ও শক্তিদাতা নেই। (সুনান আবু দাউদ, সুনান আত-তিরমিযী)

এই দোয়াগুলো পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর উপর নিজেদের নির্ভরশীলতা প্রকাশ করি এবং তাঁর সাহায্য ও রহমতের প্রত্যাশা করি।

ছ. মসজিদে প্রবেশের ও প্রস্থানকালে পঠিতব্য দোয়া

মসজিদ আল্লাহর ঘর এবং মুসলিমদের ইবাদতের স্থান। এই পবিত্র স্থানে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় আদবের সাথে কিছু মাসনুন দোয়া পাঠ করা সুন্নত।

মসজিদে প্রবেশ করার দোয়া:

আরবি: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাফতাহ লী আবওয়া-বা রাহমাতিকা।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। (সহীহ মুসলিম)

অন্যান্য বর্ণনা: প্রবেশের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর দরুদ পাঠ করাও সুন্নত।

আরবি: اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তাঁর বংশধরের উপর সালাত (রহমত) বর্ষণ করুন।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া:

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। (সহীহ মুসলিম)

অন্যান্য বর্ণনা: বের হওয়ার সময়ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর দরুদ পাঠ করা সুন্নত।

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এই দোয়াগুলো পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ কামনা করি এবং তাঁর পবিত্র ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।

জ. বাজারে প্রবেশ করার দোয়া

বাজার এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম ও লেনদেন হয় এবং অনেক সময় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিলতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করা সুন্নত, যা আমাদের আল্লাহর স্মরণ রাখতে সাহায্য করে।

বাজারে প্রবেশ করার দোয়া:

আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ  

বাংলা উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়া হুওয়া হাইয়্যুল লা ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

বাংলা অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দান করেন এবং তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মরবেন না। তাঁর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সুনান আত-তিরমিযী, সুনান ইবনে মাজাহ, মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন)

ফজিলত: যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে এই দোয়া পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকি লিখবেন, তার দশ লক্ষ গুনাহ মাফ করবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন।

ঝ. যানবাহনে আরোহণের দোয়া (সফরের দোয়া)

যানবাহনে আরোহণ করা বা সফর শুরু করার সময় আল্লাহর সাহায্য ও নিরাপত্তা কামনা করা এবং তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সুন্নত।

যানবাহনে আরোহণের দোয়া:

আরবি: سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়া মা কুন্না লাহূ মুক্বরিনীন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনক্বালিবূন।

বাংলা অর্থ: পবিত্র সেই সত্তা যিনি আমাদের জন্য একে (বাহনকে) অধীন করে দিয়েছেন, অথচ আমরা একে অধীন করার ক্ষমতা রাখতাম না। আর নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। (সূরা আয-যুখরুফ: ১৩-১৪)

সফরের দোয়া:

সফরের সময় আরও বিভিন্ন দোয়া পাঠ করা সুন্নত, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাঠ করতেন। এর মধ্যে একটি হলো:

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ، وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالأَهْلِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ওয়া‘ছা-য়িস সাফার, ওয়া কাআ-বাতিল মানযার, ওয়া সূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহল।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সফরের কষ্ট, বেদনাদায়ক দৃশ্য এবং সম্পদ ও পরিবারের কাছে খারাপভাবে ফিরে আসা থেকে আশ্রয় চাই। (সহীহ মুসলিম)

ঞ. সকাল ও সন্ধ্যার জিকির ও দোয়া (যেমন, সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার, বিভিন্ন তাসবীহ)

সকাল ও সন্ধ্যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে আল্লাহর স্মরণ (জিকির) করা এবং মাসনুন দোয়া পাঠ করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নত। এর মাধ্যমে বান্দা সারাদিনের বা সারারাতের জন্য আল্লাহর সুরক্ষা ও সাহায্য লাভ করে এবং অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে।

সকালের জিকির ও দোয়া:

  • আয়াতুল কুরসি: (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫) একবার পাঠ করা।
  • সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস: তিনবার করে পাঠ করা।
  • সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার: (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া) একবার পাঠ করা।
  • বিভিন্ন তাসবীহ ও তাহলীল: যেমন, “সুবহানাল্লাহ” (আল্লাহ পবিত্র), “আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য), “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই), “আল্লাহু আকবার” (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) – নির্দিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করা।
  • অন্যান্য মাসনুন দোয়া: যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

সন্ধ্যার জিকির ও দোয়া:

সকালের জিকির ও দোয়ার মতোই সন্ধ্যার জিকির ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত। সময়ের ভিন্নতার কারণে কিছু দোয়ায় সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে।

এই জিকির ও দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং অন্তরে শান্তি ও স্থিরতা অনুভব করে। সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার বান্দার গুনাহ মাফের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া।

ট. জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দোয়া

  • আরবি: رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
  • বাংলা উচ্চারণ: রব্বি যিদনী ইলমা।
  • বাংলা অর্থ: হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সূরা ত্বা-হা: ১১৪)

ঠ. পিতামাতার জন্য দোয়া

  • আরবি: رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
  • বাংলা উচ্চারণ: রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়া-নী সগীরা।
  • বাংলা অর্থ: হে আমার রব! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে স্নেহ মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল: ২৪)

ড. হাঁচি দিলে ও হাঁচি শুনলে দোয়া

হাঁচি দেওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। ইসলামে হাঁচি দেওয়ার সময় এবং হাঁচি শুনলে কিছু আদব ও দোয়া পালনের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

হাঁচি দিলে যা বলতে হয়:

যখন কোনো মুসলিমের হাঁচি আসে, তখন তার “আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলা সুন্নত।

আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহ।

বাংলা অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬২২৪)

হাঁচি শুনলে যা বলতে হয়:

যদি কোনো মুসলিম অন্য কোনো মুসলিমকে হাঁচি দিয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” বলতে শোনে, তবে তার “ইয়ারহামুকাল্লাহ” (আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন) বলা সুন্নত।

আরবি: يَرْحَمُكَ اللَّهُ

বাংলা উচ্চারণ: ইয়ারহামুকাল্লাহ।

বাংলা অর্থ: আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬২২৪)

হাঁচিদাতার উত্তর:

হাঁচিদাতা যখন “ইয়ারহামুকাল্লাহ” শোনে, তখন তার উত্তরে “ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম” (আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুন এবং আপনার অবস্থাকে সংশোধন করুন) বলা সুন্নত।

আরবি: يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ

বাংলা উচ্চারণ: ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম।

বাংলা অর্থ: আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুন এবং আপনার অবস্থাকে সংশোধন করুন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৩৩; সুনান আত-তিরমিযী, হাদিস নং ২৭৪০)

হাঁচির সংখ্যা:

হাদিসে এসেছে, যদি কেউ একের অধিকবার হাঁচি দেয়, তবে প্রথম হাঁচির জন্য “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলা সুন্নত। তিনবারের বেশি হলে তা সাধারণ ঠান্ডা বা অসুস্থতার কারণে হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলা জরুরি নয়।

ঢ. কাউকে ধন্যবাদ জানানোর দোয়া

  • আরবি: جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا
  • বাংলা উচ্চারণ: জাযা-কাল্লা-হু খাইরন।
  • বাংলা অর্থ: আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

ণ. নতুন কিছু দেখলে বা পেলে দোয়া

যখন কোনো মুসলিম নতুন কোনো জিনিস দেখে, তা আল্লাহর সৃষ্টি হোক বা অন্য কোনো নেয়ামত হোক, অথবা কোনো অপ্রত্যাশিত ভালো কিছু লাভ করে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং তাঁর প্রশংসা করা সুন্নত। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সেই নেয়ামতের বরকত কামনা করে।

নতুন কিছু দেখলে বা পেলে পঠিতব্য দোয়া:

সাধারণভাবে শুকরিয়া জ্ঞাপন:

আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহ।

বাংলা অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এটি যেকোনো নতুন বা ভালো কিছু দেখলে বা পেলে সাধারণভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার একটি উত্তম পন্থা।

বিশেষভাবে আল্লাহর প্রশংসা:

আরবি: مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: মা শা-আল্লা-হু লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।

বাংলা অর্থ: আল্লাহ যা চান তাই হয়, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোনো শক্তি নেই। (সূরা আল-কাহফ: ৩৯)

যদিও এই আয়াতটি কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে বর্ণিত হয়েছে, তবে কোনো সুন্দর বা আশ্চর্যজনক জিনিস দেখলে অথবা নিজের কোনো ভালো কিছু অর্জিত হলে অহংকার পরিহার করে আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করার মনোভাব প্রকাশে এটি পাঠ করা যেতে পারে।

অন্যান্য দোয়া:

এছাড়াও, পরিস্থিতি ও নেয়ামতের ধরণ অনুযায়ী অন্যান্য শুকরিয়ার দোয়াও পাঠ করা যেতে পারে। মূল বিষয় হলো অন্তরের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।

উদাহরণস্বরূপ:

  • যদি কেউ নতুন পোশাক দেখে, তবে পোশাক পরিধানের দোয়া পাঠ করা সুন্নত।
  • যদি কেউ নতুন ফল বা খাদ্য দেখে, তবে “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আত’আমানা হা-যা ওয়া রাযাক্বানা-হু মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে এটা খাওয়ালেন এবং আমাদের কোনো ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই আমাদেরকে রিযিক দান করলেন) – এই দোয়া পাঠ করা যেতে পারে (যদিও এর বিশুদ্ধতা নিয়ে কিছু মতভেদ আছে)।

বিপদ-আপদ, দুশ্চিন্তা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মাসনুন দোয়া (অর্থসহ)

মানুষের জীবন বিপদ-আপদ, দুশ্চিন্তা ও রোগব্যাধিমুক্ত নয়। এসকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা এবং তাঁর শেখানো ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রদর্শিত দোয়া পাঠ করা মুমিনের কর্তব্য। নিচে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন দোয়া উল্লেখ করা হলো:

ক. যেকোনো বিপদ ও পেরেশানিতে পড়ার দোয়া (যেমন, ইউনুস (আঃ)-এর দোয়া)

বিপদ ও চরম পেরেশানির মুহূর্তে হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থেকে যে দোয়া পড়েছিলেন, তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যুন-নূন (ইউনুস আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দোয়া করেছিলেন তা হলো:

  • আরবি: لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
  • বাংলা উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যা-লিমীন।
  • বাংলা অর্থ: (হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি। (সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭)
  • সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট ও ফজিলত: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেছেন, “যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো ব্যাপারে এই দোয়া পাঠ করবে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।” (তিরমিযী, হাদিস নং ৩৫০৫) এই দোয়াটি যেকোনো বিপদ, দুশ্চিন্তা ও সংকট থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী।

খ. দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিম্নোক্ত দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন যখন কোনো বিষয় তাঁকে চিন্তিত করত:

  • আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ  
  • বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
  • বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি চিন্তা ও শোক থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাধান্য (নির্যাতন) থেকে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৮৯৩, ৬৩৬৯)
  • সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট ও ফজিলত: এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে যাবতীয় মানসিক চাপ, অলসতা, ভীরুতা, ঋণের কঠিন পরিস্থিতি এবং মানুষের অন্যায় আধিপত্য থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়, যা মানসিক প্রশান্তি ও বাস্তব জীবনে মুক্তি লাভে সহায়ক।

গ. অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া এবং নিজের অসুস্থতায় পড়ার দোয়া

  • অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে দোয়া:
    • আরবি: لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
    • বাংলা উচ্চারণ: লা বা’সা ত্বহূরুন ইনশা-আল্লাহ।
    • বাংলা অর্থ: কোনো ক্ষতি নেই, আল্লাহর ইচ্ছায় এটা (রোগ) তোমার পবিত্রতা ও গুনাহ মাফের কারণ হবে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬১৬, ৫৬৫৬)
  • অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্যের জন্য সাতবার পড়ার দোয়া:
    • আরবি: أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ
    • বাংলা উচ্চারণ: আসআলুল্লা-হাল ‘আযীম, রব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম, আইঁ ইয়াশফিয়াকা।
    • বাংলা অর্থ: আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যিনি মহান আরশের রব, তিনি যেন তোমাকে আরোগ্য দান করেন। (সুনান আবি দাউদ, হাদিস নং ৩১০৬, তিরমিযী)
  • নিজের অসুস্থতায় ব্যথার স্থানে হাত রেখে দোয়া:
    • প্রথমে তিনবার “بِسْمِ اللَّهِ” (বিসমিল্লাহ) বলুন।
    • অতঃপর সাতবার বলুন:
      • আরবি: أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
      • বাংলা উচ্চারণ: আ‘ঊযু বিল্লা-হি ওয়া ক্বদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু।
      • বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর এবং তাঁর কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই সব অনিষ্ট থেকে, যা আমি অনুভব করছি এবং যা থেকে আমি আশঙ্কা করছি। (সহীহ মুসলিম,)

ঘ. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া

শয়তানের কুমন্ত্রণা ও যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আ’ঊযুবিল্লাহ পাঠ করা, আয়াতুল কুরসী এবং সূরা নাস ও ফালাক (মু’আওবিযাতাইন) পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর।

  • সাধারণ আশ্রয় প্রার্থনা:
    • আরবি: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
    • বাংলা উচ্চারণ: আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
    • বাংলা অর্থ: আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
  • বিশেষ দোয়া:
    • আরবি: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
    • বাংলা উচ্চারণ: আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক্ব।
    • বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৭০৮) (সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করলে কোনো আকস্মিক বিপদাপদ স্পর্শ করবে না)।

ঙ. বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া

বদনজর বা কুনজর একটি বাস্তবতা। এর থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য এই দোয়া পাঠ করতেন:

  • আরবি: أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
  • বাংলা উচ্চারণ: উ‘ঈযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বা-নিন ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিন লা-ম্মাহ। (একজনের জন্য হলে ‘উ‘ঈযুকা’ বা ‘উ‘ঈযুকি’)
  • বাংলা অর্থ: আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে দিচ্ছি প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত জীবজন্তু থেকে এবং প্রত্যেক বদনজর থেকে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৭১)
  • সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট ও ফজিলত: এই দোয়া নিজের সন্তানদের এবং নিজের জন্যও পাঠ করা যেতে পারে। এটি বদনজরের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

চ. আগুন লাগলে বা কোনো ভয় পেলে দোয়া

আগুন বা অন্য কোনো আকস্মিক ভয় পেলে “اللَّهُ أَكْبَرُ” (আল্লাহু আকবার – আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলা সুন্নাহ। এছাড়াও বিপদ থেকে রক্ষার সাধারণ দোয়াগুলো পাঠ করা যেতে পারে।

ছ. ঝড়-তুফান দেখলে পড়ার দোয়া

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন ঝড়ো হাওয়া বইত, তখন নবী (ﷺ) এই দোয়া পাঠ করতেন:

  • আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ  
  • বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফীহা, ওয়া খাইরা মা উরসিতাল বিহি। ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফীহা, ওয়া শাররি মা উরসিতাল বিহি।
  • বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এর কল্যাণ কামনা করি, এর মধ্যে যে কল্যাণ রয়েছে তা কামনা করি এবং যে কল্যাণ নিয়ে এটা প্রেরিত হয়েছে তা কামনা করি। আর আমি তোমার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, এর মধ্যে যে অনিষ্ট রয়েছে তা থেকে আশ্রয় চাই এবং যে অনিষ্ট নিয়ে এটা প্রেরিত হয়েছে তা থেকে আশ্রয় চাই। (সহীহ মুসলিম)

বিশেষ ইবাদত ও সময়ের জন্য পঠিতব্য মাসনুন দোয়া (অর্থসহ)

ইসলামে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও বিশেষ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট মাসনুন দোয়া রয়েছে, যা পালনের মাধ্যমে ইবাদতের পূর্ণতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

ক. ওযুর শুরুতে ও শেষে পঠিতব্য দোয়া

  • ওযুর শুরুতে:
    • আরবি: بِسْمِ اللَّهِ
    • বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হ।
    • বাংলা অর্থ: আল্লাহর নামে (শুরু করছি)। (সুনান নাসাঈ, হাদিস নং ৭৮, আবু দাউদ)
  • ওযুর শেষে:
    • আরবি: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ  
    • বাংলা উচ্চারণ: আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহূ। আল্লা-হুম্মাজ ‘আলনী মিনাত তাওয়্যাবীনা ওয়াজ ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন।
    • বাংলা অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সুনান তিরমিযী, হাদিস নং ৫৫)
  • ফজিলত: ওযুর শেষে এই দোয়া পাঠকারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।

খ. নামাজের বিভিন্ন অংশে পঠিতব্য দোয়া

নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন রুকন ও অংশে মাসনুন দোয়া পাঠ করা হয়। যেমন:

  • তাকবীরে তাহরীমার পর সানা/দোয়ায়ে ইস্তিফতাহ: (বিভিন্ন প্রকার সানা বর্ণিত আছে, যেমন: “সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলা-হা গাইরুকা।”)
  • রুকুতে: “সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম” (অর্থ: আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি) – কমপক্ষে তিনবার।
  • রুকু থেকে উঠে (কওমা): “সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” (অর্থ: যে আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার প্রশংসা শোনেন) – ইমাম ও একাকী নামাজির জন্য। অতঃপর “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহি” (অর্থ: হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সকল প্রশংসা; এমন প্রশংসা যা প্রচুর, পবিত্র ও বরকতময়)।
  • সিজদায়: “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা” (অর্থ: আমার সর্বোচ্চ রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি) – কমপক্ষে তিনবার। সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করার নির্দেশ রয়েছে।
  • দুই সিজদার মাঝে (জলসা): “রব্বিগফির লী, রব্বিগফির লী” (অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন, হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন) অথবা আরও বিস্তারিত দোয়া: “আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ারযুক্বনী ওয়াজবুরনী ওয়ারফা‘নী।”
  • তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু): (এটি একটি প্রসিদ্ধ দোয়া যা নামাজের বৈঠকে পাঠ করা হয়)।
  • দরুদ শরীফ: (তাশাহ্হুদের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়, যেমন দরুদে ইবরাহীম)।
  • সালামের আগের দোয়া (দোয়া মাসুরা): (বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত আছে, যেমন: “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া মিন ‘আযা-বিল ক্ববর, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল”)।

গ. ইস্তিখারার নামাজের দোয়া

জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমরা প্রায়শই এমন গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্তের সম্মুখীন হই, যখন কোনো একটি বিশেষ কাজ শুরু করা অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কোনটি আমাদের জন্য উত্তম হবে, তা নিয়ে আমরা দ্বিধায় ভুগতে থাকি। এই পরিস্থিতিতে ইসলাম আমাদের একটি সুন্দর পথ দেখায় – ইস্তিখারার নামাজ।

ইস্তিখারা শব্দের অর্থ হলো কল্যাণ কামনা করা। যখন কোনো মুসলিম কোনো বৈধ বিষয়ে দ্বিধায় পড়ে এবং বুঝতে পারে না যে কোনটি তার জন্য ভালো হবে, তখন সে আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনা চেয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে। এই নামাজে সূরা ফাতিহার পর যেকোনো সূরা পড়া যেতে পারে। নামাজের পর মনোযোগের সাথে একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করা হয়, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শিখিয়েছেন।

দোয়াটিতে বান্দা আল্লাহর অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতার কাছে নিজের অপারগতা স্বীকার করে। সে বলে, হে আল্লাহ! আপনি সর্বজ্ঞানী, আপনি জানেন আমার জন্য কোন কাজটি আমার দ্বীন, আমার জীবন, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর। যদি এই কাজটি আমার জন্য ভালো হয়, তবে আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন এবং সহজ করে দিন, আর তাতে বরকত দান করুন। আর যদি এই কাজটি আমার জন্য খারাপ হয়, তবে তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে রাখুন। যেখানেই আমার জন্য কল্যাণ থাকুক, আপনি তাই নির্ধারণ করুন এবং আমাকে তাতে সন্তুষ্ট রাখুন।

ইস্তিখারার পর বান্দার কর্তব্য হলো আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং কাজটি শুরু করা। স্বপ্নে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া জরুরি নয়। বরং, ইস্তিখারার পর বান্দার অন্তরে যে কাজের প্রতি স্বস্তি ও আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তাকেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণকর ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত।

ইস্তিখারা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। এটি আমাদের শেখায় যে জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে আমাদের আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। তাঁর জ্ঞানের উপর নির্ভর করা এবং তাঁর কাছে কল্যাণ কামনা করাই ইস্তিখারার মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর উপর আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করি এবং যেকোনো সিদ্ধান্তের ভালো-মন্দ ফল আল্লাহর হাতে সোপর্দ করি।

ঘ. বৃষ্টির জন্য দোয়া (সালাতুল ইসতিসকা) ও বৃষ্টি দেখলে পড়ার দোয়া

  • বৃষ্টির জন্য দোয়া (ইসতিসকা): এটি একটি বিশেষ নামাজ ও খুতবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। বিভিন্ন দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
  • বৃষ্টি দেখলে পড়ার দোয়া:
    • আরবি: اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
    • বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা সায়্যিবান না-ফি‘আ।
    • বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! এই বৃষ্টিকে উপকারী ও কল্যাণকর করে দিন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১০৩২)

ঙ. নতুন চাঁদ দেখার দোয়া

  • আরবি: اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ
  • বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিল্ ইয়ুমনি ওয়াল ঈমা-ন, ওয়াস্ সালামাতি ওয়াল ইসলা-ম। রব্বী ওয়া রব্বুকাল্লা-হ।
  • বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! এই চাঁদকে আমাদের উপর বরকত, ঈমান, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে উদিত করুন। (হে চাঁদ!) আমার ও তোমার রব হলেন আল্লাহ। (সুনান তিরমিযী, হাদিস নং ৩৪৫১)

চ. কবর জিয়ারতের দোয়া কবরস্থানে গেলে মৃত মুমিনদের জন্য এই দোয়া পাঠ করা সুন্নাহ:

  • আরবি: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ  
  • বাংলা উচ্চারণ: আস্সালা-মু ‘আলাইকুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীন। ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হিকূন। নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ।
  • বাংলা অর্থ: হে গৃহসমূহের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি কামনা করছি। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৯৭৫)

মাসনুন দোয়া পাঠ ও আমলের অসামান্য ফজিলত ও উপকারিতাসমূহ

মাসনুন দোয়া পাঠ ও সেগুলো দৈনন্দিন জীবনে আমল করার মাধ্যমে একজন মুমিন অগণিত ফজিলত ও উপকারিতা লাভ করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

ক. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অফুরন্ত রহমত লাভ

মাসনুন দোয়া পাঠের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করে। ফলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তার উপর অফুরন্ত রহমত বর্ষণ করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টিই মুমিনের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

খ. সুন্নাহ পালনের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ)-এর শাফায়াত লাভের আশা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতিটি সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার মধ্যে রয়েছে কল্যাণ। মাসনুন দোয়াগুলো সুন্নাহর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যে ব্যক্তি সুন্নাহকে ভালোবাসবে ও অনুসরণ করবে, সে কিয়ামতের দিন রাসূল (ﷺ)-এর শাফায়াত লাভের আশা রাখতে পারে।

গ. ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি এবং অন্তরের কালিমা দূর হওয়া

মাসনুন দোয়াগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করে পাঠ করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। আল্লাহর শক্তি, ক্ষমতা ও দয়ার কথা স্মরণ হওয়ায় অন্তরে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) সৃষ্টি হয়। নিয়মিত দোয়ার মাধ্যমে অন্তরের মরিচা ও কালিমা দূর হয়ে তা পরিশুদ্ধ ও আলোকিত হয়।

ঘ. জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও কল্যাণ লাভ

দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের শুরুতে ও শেষে নির্দিষ্ট মাসনুন দোয়া পাঠ করলে সেই কাজে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত (প্রাচুর্য ও কল্যাণ) নাযিল হয়। কাজগুলো সহজ হয়, শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সার্বিকভাবে জীবনে আল্লাহর সাহায্য ও কল্যাণ পরিলক্ষিত হয়।

ঙ. আল্লাহর সাথে সার্বক্ষণিক আধ্যাত্মিক সংযোগ স্থাপন ও তাঁর স্মরণে লিপ্ত থাকা

মাসনুন দোয়াগুলো বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন অবস্থায় পাঠ করার বিধান রয়েছে। এর ফলে একজন মুমিন দিনের অধিকাংশ সময় আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকতে পারে। এই সার্বক্ষণিক স্মরণ আল্লাহর সাথে বান্দার এক গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগ (Spiritual Connection) তৈরি করে, যা তাকে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং সৎ কাজে অগ্রগামী হতে সাহায্য করে।

চ. গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি

অনেক মাসনুন দোয়ার ফজিলত হিসেবে গুনাহ মাফের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, ওযুর শেষের দোয়া, সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার ইত্যাদি। একনিষ্ঠভাবে দোয়া করলে আল্লাহ বান্দার ছোট ছোট গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং তাঁর দরবারে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।

ছ. শয়তানের প্ররোচনা ও যাবতীয় অনিষ্ট থেকে সুরক্ষিত থাকা

বিভিন্ন মাসনুন দোয়া রয়েছে যা শয়তানের কুমন্ত্রণা, বদনজর, জাদু এবং অন্যান্য জাগতিক ও আধ্যাত্মিক অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশিত। এগুলো নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাকে এসকল বিপদাপদ থেকে সুরক্ষিত রাখেন।

মাসনুন দোয়া মুখস্থ করা ও দৈনন্দিন জীবনে আমলের সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি

মাসনুন দোয়াগুলোর ফজিলত লাভ এবং জীবনে তার ইতিবাচক প্রভাব পেতে হলে সেগুলো মুখস্থ করা এবং নিয়মিত আমল করা অপরিহার্য। নিচে কিছু সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

ক. প্রতিদিন অল্প অল্প করে অর্থ বুঝে মুখস্থ করার চেষ্টা করা

একসাথে অনেক দোয়া মুখস্থ করার চেষ্টা না করে প্রতিদিন একটি বা দুটি ছোট দোয়া অর্থসহ বুঝে মুখস্থ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। অর্থ বুঝলে মুখস্থ করা সহজ হয় এবং অন্তরে তার প্রভাব পড়ে। মুখস্থ করার জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়, যেমন ফজরের পর বা এশার পর, বেছে নিতে পারেন।

খ. দোয়ার প্রেক্ষাপট ও সংশ্লিষ্ট কাজের সময় দোয়া পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা

যে দোয়াটি যে কাজের বা সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেই কাজের সময় বা সেই পরিস্থিতিতে তা পাঠ করার অভ্যাস করুন। যেমন, খাবার শুরু করার আগে খাবারের দোয়া, ঘরে প্রবেশের সময় প্রবেশের দোয়া ইত্যাদি। এভাবে আমল করলে দোয়াগুলো সহজে স্মৃতিতে গেঁথে যায় এবং নিয়মিত আমল করাও সহজ হয়।

গ. নির্ভরযোগ্য দোয়া কার্ড, ছোট বই বা ইসলামিক অ্যাপ ব্যবহার করা

আজকাল মাসনুন দোয়ার অনেক ছোট ছোট পকেট সাইজের বই বা কার্ড পাওয়া যায়। এগুলো সাথে রাখলে দেখে দেখে পড়া ও মুখস্থ করা সহজ হয়। এছাড়া, অনেক নির্ভরযোগ্য ইসলামিক অ্যাপ রয়েছে যেখানে উচ্চারণ ও অর্থসহ মাসনুন দোয়াগুলো সংকলিত থাকে। এগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অ্যাপের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।

ঘ. পরিবারের সদস্যদের সাথে, বিশেষ করে শিশুদের সাথে সম্মিলিতভাবে দোয়া পাঠ ও শেখার আয়োজন করা

পরিবারের সদস্যরা মিলে প্রতিদিন কিছু সময় দোয়া পাঠ ও আলোচনার জন্য নির্ধারণ করতে পারেন। এতে বড়দের দোয়াগুলো যেমন ঝালাই হয়ে যাবে, তেমনি ছোটরাও সহজে শিখতে পারবে। শিশুদেরকে ছোট ছোট দোয়াগুলো ছন্দে ছন্দে বা গল্পের মাধ্যমে শেখালে তারা বেশি আগ্রহী হবে।

ঙ. মুখস্থ দোয়াগুলো নিয়মিত নফল নামাজে পাঠ করা

যে দোয়াগুলো মুখস্থ হয়েছে, সেগুলো নফল নামাজের সিজদায় বা সালাম ফেরানোর আগে পাঠ করার অভ্যাস করুন। এতে দোয়াগুলো স্মৃতিতে আরও মজবুত হবে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তা পেশ করার সুযোগও তৈরি হবে।

চ. দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে নিয়মিত আলোচনা ও স্মরণ করা

মাসনুন দোয়াগুলোর গুরুত্ব, ফজিলত এবং সেগুলো পাঠের উপকারিতা সম্পর্কে নিজে পড়ুন এবং অন্যদের সাথে আলোচনা করুন। এতে দোয়া পাঠের প্রতি আগ্রহ ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে। কোনো আলেমের আলোচনা শোনা বা ইসলামিক বই পড়াও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর কাছে তাওফীক কামনা করা, যেন তিনি এই বরকতময় আমলগুলো নিয়মিত করার এবং এর সুফল লাভ করার তৌফিক দান করেন।

দোয়া করার সময় সাধারণ মানুষ যেসব ভুলত্রুটি করে থাকে: একটি পর্যালোচনা

মানুষ স্বভাবতই দুর্বল এবং আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাই যখন কোনো প্রয়োজন বা কষ্টের সম্মুখীন হয়, তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করা স্বাভাবিক। তবে, অজ্ঞতা বা অসচেতনতার কারণে দোয়ার আদব ও শর্তাবলী পালনে আমরা অনেক সময় ভুল করে থাকি। এই ভুলত্রুটিগুলো দোয়া কবুলের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। আসুন, দোয়া করার সময় সাধারণ মানুষ যেসব ভুল করে থাকে, সেগুলোর একটি পর্যালোচনা করা যাক:

ক. দোয়ায় হারাম বা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ কোনো কিছু প্রার্থনা করা

অনেক সময় মানুষ এমন কিছু চায় যা শরীয়তে হারাম বা নিষিদ্ধ। যেমন, কারো ক্ষতি কামনা করা, অন্যায় কাজের সাহায্য চাওয়া, মাদকদ্রব্য বা অবৈধ সম্পদের জন্য দোয়া করা ইত্যাদি। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র এবং তিনি পবিত্র ও ন্যায়সঙ্গত প্রার্থনাই কবুল করেন। হারাম কোনো কিছুর জন্য দোয়া করা সুস্পষ্ট ভুল এবং এটি দোয়া কবুল না হওয়ার অন্যতম কারণ।

খ. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বা অন্যের ক্ষতি করার জন্য দোয়া করা

ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কোনো কারণে মনোমালিন্য বা শত্রুতা সৃষ্টি হলেও, কারো ক্ষতি কামনা করে বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য দোয়া করা কঠোরভাবে নিষেধ। এ ধরনের দোয়া আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং সমাজে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।

গ. দোয়ায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে সীমা লঙ্ঘন করা বা ছন্দবদ্ধ বাক্য বলার চেষ্টা করা

দোয়া করার সময় বিনয় ও আন্তরিকতা জরুরি। কিন্তু অনেক মানুষ আবেগের বশে বা লোক দেখানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করে, সুর করে বা ছন্দ মিলিয়ে দোয়া করার চেষ্টা করে। এটি দোয়ার আদবের পরিপন্থী। সহজ, সরল ও আন্তরিকভাবে নিজের প্রয়োজন আল্লাহর কাছে পেশ করাই উত্তম।

ঘ. অধৈর্য হয়ে দোয়া কবুল হচ্ছে না ভেবে দোয়া করাই ত্যাগ করা

দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিতে পারেন, বিলম্বে দিতে পারেন অথবা এর বিনিময়ে আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দান করতে পারেন। কিন্তু অনেক মানুষ তাড়াহুড়ো করে এবং দোয়া কবুল না হতে দেখে হতাশ হয়ে দোয়া করাই ছেড়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যতক্ষণ বান্দা তাড়াহুড়ো না করে, ততক্ষণ তার দোয়া কবুল হতে থাকে।

ঙ. শুধুমাত্র জাগতিক বিপদ ও প্রয়োজনের সময় দোয়া করা, কিন্তু স্বচ্ছলতা ও শান্তিতে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া

আমাদের মধ্যে অনেকেই যখন কোনো কঠিন বিপদ বা অভাবের সম্মুখীন হই, তখন ব্যাকুল হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি। কিন্তু যখন আল্লাহ সেই বিপদ দূর করেন এবং স্বচ্ছলতা দান করেন, তখন আমরা অনেকেই আল্লাহকে ভুলে যাই এবং দোয়া করা ছেড়ে দেই। এটি কৃতজ্ঞতার অভাব এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা প্রকাশ করে।

চ. লোকদেখানো বা শুনানোর উদ্দেশ্যে দোয়া করা

দোয়া একটি ইবাদত এবং সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যদি কেউ লোক দেখানোর বা মানুষের কাছে বাহবা পাওয়ার জন্য দোয়া করে, তবে সেই দোয়ায় ইখলাস থাকে না এবং তা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গোপনে ও আন্তরিকভাবে দোয়া করাই উত্তম।

ছ. দোয়ার পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পাঠ না করা

দোয়ার আদব হলো আল্লাহর প্রশংসা (হামদ) ও গুণকীর্তন করা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করা। এটি দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। অনেক মানুষ সরাসরি নিজেদের প্রয়োজন আল্লাহর কাছে পেশ করে, কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ আদবটি পালন করে না।

জ. দোয়ায় صدای স্বর নিচু রাখা

দোয়া করার সময় বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা জরুরি। উচ্চস্বরে বা চিৎকার করে দোয়া করা আদবের খেলাফ। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, তাই আন্তরিকভাবে নিচু স্বরে দোয়া করাই উত্তম।

এই ভুলত্রুটিগুলো পরিহার করে আমরা যদি দোয়ার সঠিক আদব ও শর্তাবলী মেনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তবে ইনশাআল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

মাসনুন দোয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন

মাসনুন দোয়া কেবল কিছু মুখস্ত বাক্য উচ্চারণ নয়, বরং এটি আল্লাহর সাথে আমাদের আধ্যাত্মিক সংযোগ স্থাপনের শক্তিশালী মাধ্যম। নিয়মিত মাসনুন দোয়া পাঠ ও আমলের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে:

ক. নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক ও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি

মাসনুন দোয়ায় আল্লাহর উপর ভরসা ও তাঁর রহমতের আশা থাকে। যখন আমরা নিয়মিত আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই এবং তাঁর উপর নির্ভর করি, তখন আমাদের মন থেকে নেতিবাচক চিন্তা ও হতাশা দূর হয় এবং একটি ইতিবাচক ও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।

খ. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ ও শোকরগুজারী বৃদ্ধি

মাসনুন দোয়ায় আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের স্বীকৃতি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ থাকে। যখন আমরা নিয়মিত আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহের জন্য শুকরিয়া আদায় করি, তখন আমাদের অন্তরে কৃতজ্ঞতাবোধ বৃদ্ধি পায় এবং আমরা জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে শিখি।

গ. আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা তৈরি হওয়া

মাসনুন দোয়া আমাদের শেখায় যে আমাদের জীবনের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। যখন আমরা নিয়মিত তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তখন আমাদের অন্তরে আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। এই নির্ভরশীলতা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে এবং আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করে।

ঘ. উন্নত ও মার্জিত চরিত্র গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন

মাসনুন দোয়ায় আমরা উন্নত চরিত্র ও উত্তম গুণাবলী অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। নিয়মিত এই ধরনের দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহনশীলতা ও ক্ষমাশীলতার মতো গুণাবলী বিকশিত হতে শুরু করে।

ঙ. সমাজে পারস্পরিক সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতা বৃদ্ধি

মাসনুন দোয়ায় আমরা নিজেদের পাশাপাশি অন্যান্য মুমিন ভাই-বোনদের জন্যও কল্যাণ কামনা করি। নিয়মিত এই ধরনের দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমাদের অন্তরে অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতার অনুভূতি জাগ্রত হয় এবং সমাজে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ – Search Engine Rich Snippet এর জন্য)

১. মাসনুন দোয়া বলতে ঠিক কী বোঝায়?

মাসনুন দোয়া হলো সেইসব দোয়া যা সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক নির্দেশিত, আমলকৃত বা অনুমোদিত। এগুলো কুরআন ও সহীহ হাদিসের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং এগুলোর শব্দচয়ন ও ভাবের গভীরতা সাধারণ দোয়ার তুলনায় স্বতন্ত্র।

২. সবচেয়ে শক্তিশালী বা তাৎপর্যপূর্ণ মাসনুন দোয়া কোনটি?

সকল মাসনুন দোয়াই তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। তবে, সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া), আয়াতুল কুরসি এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক পঠিত দোয়াগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

৩. মাসনুন দোয়া কি অবশ্যই আরবিতে পড়তে হবে, নাকি বাংলায় পড়া যাবে?

মাসনুন দোয়াগুলো মূলত আরবি ভাষায় বর্ণিত। সালাতের ভেতরের দোয়াগুলো আরবিতেই পড়া উত্তম। তবে, সালাতের বাইরের দোয়াগুলো যদি কেউ আরবিতে পড়তে না পারে, তবে আন্তরিকভাবে নিজের ভাষায়ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারে। তবে, মাসনুন দোয়ার মূল ভাব ও ফযিলত লাভের জন্য আরবিতে শেখা ও পাঠ করা অধিক উত্তম।

৪. ভুল মাসনুন দোয়া পড়লে বা অর্থে ভুল করলে কি গুনাহ হবে?

অজ্ঞতাবশত বা অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে আল্লাহ ক্ষমাশীল। তবে, সঠিকভাবে শেখা ও পড়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি অর্থের ভুল মারাত্মক হয় এবং আল্লাহর শানের খেলাফ হয়, তবে তা পরিহার করা উচিত।

৫. দিনে ও রাতে পঠিতব্য প্রধান কিছু মাসনুন দোয়া কী কী?

দিনে ও রাতে পঠিতব্য প্রধান কিছু মাসনুন দোয়া হলো: ঘুম থেকে ওঠার ও ঘুমানোর দোয়া, সকাল ও সন্ধ্যার জিকির ও দোয়া, খাবার শুরু ও শেষের দোয়া, পোশাক পরিধান ও খোলার দোয়া ইত্যাদি।

৬. দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত কী?

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ইখলাস (একনিষ্ঠতা)। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা এবং তাঁর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা জরুরি।

৭. মাসনুন দোয়া মুখস্থ করার সহজ উপায় কী?

প্রতিদিন অল্প অল্প করে অর্থ বুঝে মুখস্থ করার চেষ্টা করা, দোয়ার প্রেক্ষাপট জানা, নিয়মিত পাঠ করা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্মিলিতভাবে শেখা মাসনুন দোয়া মুখস্থ করার সহজ উপায়।

উপসংহার: মাসনুন দোয়া হোক আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী

মাসনুন দোয়ার তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনায় সুস্পষ্ট। এটি কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদর্শ অনুসরণই নয়, বরং আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের এক শক্তিশালী উপায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আল্লাহর সাহায্য ও কল্যাণ লাভ এবং দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য মাসনুন দোয়ার কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং, আসুন আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি এবং জাগরণ থেকে নিদ্রা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশিত দোয়াগুলোকে আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত করি। অবশেষে, আমরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে এই মর্মে আর্জি জানাই, যেন তিনি আমাদের মাসনুন দোয়াগুলো কণ্ঠস্থ করা, অনুধাবন করা ও তদনুযায়ী আমল করার সামর্থ্য দান করেন, আমাদের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন, ঈমান বৃদ্ধি করেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আমীন।

মাসনুন দোয়া : যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচে মন্তব্য করুন। পোস্টটি যদি তথ্যবহুল মনে হয়, তবে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top