পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কাকে বলে? পাসওয়ার্ড ম্যানেজার একটি সফটওয়্যার টুল বা অ্যাপ্লিকেশন যা বিভিন্ন ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা প্ল্যাটফর্মের জন্য আপনার পাসওয়ার্ডগুলি সংরক্ষণ, তৈরি এবং পরিচালনা করতে সহায়তা করে। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন করি এবং প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এত পাসওয়ার্ড মনে রাখা এবং ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হতে পারে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এই সমস্যার সমাধান দেয়, যা আপনার অনলাইন নিরাপত্তা এবং ব্যবহারের সুবিধা বাড়ায়।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কাকে বলে? কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হলো এমন একটি টুল যা আপনার পাসওয়ার্ডগুলোকে নিরাপদে সংরক্ষণ করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্ম পূরণ করতে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র আপনার পাসওয়ার্ডগুলোকে সংগঠিত করে না বরং হ্যাকিং, ফিশিং আক্রমণ এবং তথ্য চুরি থেকে রক্ষা করতেও সহায়ক। যখন আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করেন, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার একটি একক মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে সকল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের সুযোগ দেয়, ফলে আপনার প্রতিটি পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা থেকে মুক্তি মেলে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য
- পাসওয়ার্ড জেনারেশন: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার শক্তিশালী এবং জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারে।
- পাসওয়ার্ড স্টোরেজ: নিরাপদে সমস্ত পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে।
- ফর্ম ফিলিং: স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগইন ফর্ম পূরণ করে দ্রুত অ্যাক্সেস দেয়।
- এনক্রিপশন: পাসওয়ার্ড এনক্রিপ্ট করে রাখে, যা নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কেন ব্যবহার করবেন?
আপনি হয়তো মনে করেন, একটি সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সমস্ত অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা সবচেয়ে সহজ। তবে এই অভ্যাসটি আপনার নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। একটি পাসওয়ার্ড ফাঁস হলে আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এজন্য শক্তিশালী এবং আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা মনে রাখা বেশ কঠিন। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এই সমস্যার সমাধান দেয়। এটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করে এবং আপনার সমস্ত পাসওয়ার্ড এক জায়গায় নিরাপদে সংরক্ষণ করে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সুবিধা
- অসংখ্য পাসওয়ার্ড স্মরণ করতে হবে না: আপনি শুধুমাত্র একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখবেন, যা আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্টের জন্য কাজ করবে।
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার জটিল এবং নিরাপদ পাসওয়ার্ড তৈরি করতে সহায়ক।
- নিরাপত্তা বৃদ্ধি: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার তথ্যকে সুরক্ষিত রাখে।
- স্বয়ংক্রিয় ফর্ম পূরণ: লগইন করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসওয়ার্ড ফিল করে দেয়।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের প্রকারভেদ
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কয়েকটি প্রকারে আসে। আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দ অনুযায়ী আপনি সঠিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বেছে নিতে পারেন। এখানে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ক্লাউড-ভিত্তিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
এই ধরনের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার সমস্ত পাসওয়ার্ড ক্লাউডে সংরক্ষণ করে। আপনি যেকোনো ডিভাইস থেকে আপনার পাসওয়ার্ডগুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারেন। এতে সুবিধা হলো, আপনার পাসওয়ার্ড সবসময় সিঙ্ক থাকে এবং আপনি বিভিন্ন ডিভাইস থেকে সহজে লগইন করতে পারেন। উদাহরণ: LastPass, Dashlane।
২. লোকাল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
এই ধরনের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার ডিভাইসে সরাসরি ইনস্টল হয় এবং আপনার পাসওয়ার্ডগুলোকে লোকাল ফাইল হিসেবে সংরক্ষণ করে। এটি ক্লাউড-ভিত্তিকের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা দিতে পারে কারণ কোনো তৃতীয় পক্ষের সার্ভারে আপনার পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা হয় না। উদাহরণ: KeePass।
৩. ব্রাউজার-ভিত্তিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
এটি বিভিন্ন ওয়েব ব্রাউজারে অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং আপনার লগইন তথ্যগুলো ব্রাউজারেই সংরক্ষণ করা হয়। গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফট এজ এবং মজিলা ফায়ারফক্স-এর মত ব্রাউজারগুলোতে এই ফিচার থাকে। এটি ব্যবহার করা সহজ হলেও নিরাপত্তার দিক থেকে কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে।
৪. এন্টারপ্রাইজ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
এন্টারপ্রাইজ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বড় সংস্থাগুলোর জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অনেক ব্যবহারকারী এবং তাদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। উদাহরণ: 1Password Business, LastPass Enterprise।
সেরা পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলির পর্যালোচনা
বাজারে অনেক ধরনের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার রয়েছে, তবে কিছু জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সম্পর্কে জানুন:
১. LastPass
LastPass হলো একটি জনপ্রিয় ক্লাউড-ভিত্তিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। এটি আপনার সমস্ত পাসওয়ার্ড ক্লাউডে সংরক্ষণ করে এবং আপনি যেকোনো ডিভাইস থেকে আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারেন। এটি ফ্রি এবং প্রিমিয়াম প্ল্যান উভয়ই অফার করে। প্রিমিয়াম প্ল্যানে আরও বেশি নিরাপত্তা এবং অ্যাডভান্সড ফিচার পাওয়া যায়।
২. Dashlane
Dashlane একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ম্যানেজার যা এনক্রিপ্টেড পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ এবং ফর্ম ফিলিংয়ের সুবিধা দেয়। এটি একটি সহজ ইউজার ইন্টারফেস এবং দ্রুতগতির সিঙ্কিং সিস্টেমের জন্য পরিচিত। এটি একটি প্রিমিয়াম প্ল্যান অফার করে, যা আরো বেশি ফিচার এবং ক্লাউড ব্যাকআপ সরবরাহ করে।
৩. 1Password
1Password একটি অত্যন্ত নিরাপদ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার, যা স্থানীয় এবং ক্লাউড উভয় ধরনের স্টোরেজ অপশন অফার করে। এটি অত্যন্ত ব্যবহারকারী-বান্ধব এবং সকল ডিভাইসে সহজে ব্যবহার করা যায়। এটি একটি ফ্রি ট্রায়াল অফার করে এবং প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানের মাধ্যমে অ্যাডভান্সড ফিচার সরবরাহ করে।
৪. KeePass
KeePass হলো একটি ওপেন-সোর্স পাসওয়ার্ড ম্যানেজার, যা আপনার পাসওয়ার্ডগুলো স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করে। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং ক্লাউড-ভিত্তিক স্টোরেজ থেকে দূরে থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ। যদিও এর ইন্টারফেস কিছুটা জটিল, তবে এটি অনেক ব্যবহারকারীর মধ্যে জনপ্রিয়।
কীভাবে একটি ভাল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বাছাই করবেন?
একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বেছে নেওয়ার সময় আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে। আপনার অনলাইন নিরাপত্তা এবং ডেটার গোপনীয়তা এই টুলের উপর নির্ভরশীল। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখতে হবে:
১. নিরাপত্তা (Security)
নিরাপত্তা হলো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বাছাই করার সময় প্রথম বিবেচনা করার বিষয়। নিশ্চিত করুন যে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটি শক্তিশালী এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। 256-bit AES এনক্রিপশন একটি শিল্প-মানের প্রযুক্তি যা আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক।
২. ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা (User Experience)
পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটির ব্যবহার কতটা সহজ এবং কতটা ব্যবহারকারী-বান্ধব তা দেখুন। এটি এমন হতে হবে যে আপনি সহজেই পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ, তৈরি এবং ফর্ম পূরণ করতে পারেন। অনেক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্বয়ংক্রিয় ফিলিং অপশন সরবরাহ করে, যা লগইন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে।
৩. মাল্টি-ডিভাইস সিঙ্ক (Multi-device Sync)
আপনি যদি একাধিক ডিভাইস ব্যবহার করেন, তাহলে নিশ্চিত করুন যে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটি মাল্টি-ডিভাইস সিঙ্কিং সমর্থন করে। এটি আপনাকে বিভিন্ন ডিভাইস থেকে সহজে অ্যাক্সেস করতে সহায়ক হবে। ক্লাউড-ভিত্তিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলোর বেশিরভাগ এই ফিচারটি সরবরাহ করে, যাতে আপনার পাসওয়ার্ডগুলো সুরক্ষিতভাবে সব ডিভাইসে অ্যাক্সেসযোগ্য থাকে।
৪. ফ্রি বনাম প্রিমিয়াম (Free vs. Premium Features)
বেশ কিছু পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ফ্রি ভার্সন অফার করে, তবে প্রিমিয়াম প্ল্যানের মাধ্যমে আরও বেশি ফিচার পাওয়া যায়। প্রিমিয়াম প্ল্যানে সাধারণত আরও উন্নত নিরাপত্তা, মাল্টি-ডিভাইস সিঙ্কিং এবং ক্লাউড ব্যাকআপ ফিচার পাওয়া যায়। আপনি যদি সেরা নিরাপত্তা চান, প্রিমিয়াম প্ল্যান আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
৫. ব্যাকআপ ও রিকভারি অপশন (Backup & Recovery)
আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটি কীভাবে ব্যাকআপ এবং রিকভারি সমর্থন করে তা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি কোনো কারণে আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। অনেক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার দুই স্তরের প্রমাণীকরণ (2FA) এবং বায়োমেট্রিক লক সমর্থন করে, যা নিরাপত্তা বাড়ায়।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সুবিধা এবং অসুবিধা
যেকোনো প্রযুক্তির মতোই, পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে। চলুন সেগুলো বিস্তারিতভাবে দেখি।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সুবিধা:
- সকল পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার সকল পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখে এবং আপনি সবকিছু এক জায়গায় রাখতে পারেন।
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি: আপনি নিজে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে না পারলেও পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার জন্য জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারে।
- বিভিন্ন পাসওয়ার্ড মনে রাখার প্রয়োজন নেই: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করলে আপনাকে কেবল একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে। এটি আপনার জন্য জীবন সহজ করে দেয়।
- স্বয়ংক্রিয় ফর্ম পূরণ: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্ম এবং পাসওয়ার্ড ইনপুট পূরণ করে, যা আপনার সময় বাঁচায় এবং লগইন প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে তোলে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের অসুবিধা:
- একক পয়েন্ট অফ ফেইলিউর: যদি আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড ভুলে যান বা যদি কোনো হ্যাকার সেটি পেয়ে যায়, তাহলে আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
- কিছু ম্যানেজার ক্লাউড-ভিত্তিক: ক্লাউড-ভিত্তিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ক্ষেত্রে, যদি কোম্পানির ডেটাবেজ হ্যাক হয় তবে আপনার পাসওয়ার্ডের ঝুঁকি হতে পারে।
- মানবীয় ভুল: আপনি যদি ভুলভাবে পাসওয়ার্ড ইনপুট করেন বা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তবে আপনার তথ্যের ঝুঁকি থাকতে পারে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার: নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল হয়ে উঠেছে। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি ও বেড়ে চলেছে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ভবিষ্যতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলোতে উন্নততর এনক্রিপশন প্রযুক্তি, বায়োমেট্রিক লগইন এবং আরও বেশি নিরাপত্তা ফিচার যুক্ত হতে পারে।
বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা:
বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা, যেমন আঙুলের ছাপ বা মুখের স্বীকৃতি প্রযুক্তি, পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলোতে নিরাপত্তার একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করতে পারে। এটি বর্তমানে কিছু পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে ব্যবহৃত হয় এবং ভবিষ্যতে এটি আরও উন্নত ও প্রচলিত হয়ে উঠতে পারে।
দুই স্তরের প্রমাণীকরণ (Two-factor Authentication, 2FA):
2FA ব্যবহার করা বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলো 2FA সমর্থন করে এবং এটি আপনার পাসওয়ার্ড ব্যবহারের নিরাপত্তা বাড়ায়।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার না করলে কী হতে পারে?
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার না করলে আপনি একাধিক অনলাইন হুমকির মুখোমুখি হতে পারেন। অনেক ব্যবহারকারী একটি সাধারণ এবং দুর্বল পাসওয়ার্ড বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করেন, যা হ্যাকারদের জন্য সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। যদি একটি সাইট থেকে আপনার পাসওয়ার্ড চুরি হয়, তবে হ্যাকাররা আপনার অন্যান্য অ্যাকাউন্টে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে।
হ্যাকিং ও ফিশিং আক্রমণ:
একটি দুর্বল পাসওয়ার্ড সহজেই হ্যাক করা যেতে পারে, বিশেষত যদি এটি সাধারণ পাসওয়ার্ডের মধ্যে একটি হয় (যেমন “123456”, “password” ইত্যাদি)। ফিশিং আক্রমণের মাধ্যমে আপনার পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করার জন্য প্রতারণামূলক ইমেল বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হতে পারে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করলে এ ধরনের আক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
পাসওয়ার্ড পুনরায় ব্যবহার (Password Reuse):
একাধিক ওয়েবসাইট বা অ্যাপের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা একটি বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি। একটি পাসওয়ার্ড ফাঁস হলে আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করলে প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা, জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি এবং সংরক্ষণ করা যায়, যা নিরাপত্তা বাড়ায়।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার সমস্ত পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে, এনক্রিপ্ট করে এবং আপনার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসওয়ার্ড পূরণ করে। আপনি শুধুমাত্র একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখবেন এবং সেটির মাধ্যমে সকল পাসওয়ার্ড অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
প্রশ্ন: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, বেশিরভাগ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে এবং আপনার পাসওয়ার্ডগুলোকে সুরক্ষিত রাখে। তবে সবসময় নির্ভরযোগ্য এবং উচ্চ মানের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা উচিত।
প্রশ্ন: ক্লাউড-ভিত্তিক এবং লোকাল পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ক্লাউড-ভিত্তিক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার পাসওয়ার্ডগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ করে এবং যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে। লোকাল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনার ডিভাইসে সরাসরি পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে এবং ক্লাউডের উপর নির্ভর করে না।
প্রশ্ন: একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বেছে নেওয়ার সময় কী বিবেচনা করা উচিত?
উত্তর: নিরাপত্তা, ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা, মাল্টি-ডিভাইস সিঙ্কিং, ব্যাকআপ ও রিকভারি অপশন এবং প্রিমিয়াম ফিচার প্রাধান্য পায়।
আরও জানুন:ন্যানো টেকনোলজি কি? আবিষ্কার করুন কীভাবে পৃথিবী বদলে দিচ্ছে!
উপসংহার: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কেন আপনার অনলাইন নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য?
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট এবং ডেটার নিরাপত্তা বাড়ানোর একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। দুর্বল পাসওয়ার্ড এবং পাসওয়ার্ড পুনরায় ব্যবহারের ফলে যে হুমকির মুখোমুখি হতে হয় তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি ভালো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অপরিহার্য। এটি আপনার পাসওয়ার্ড সংরক্ষণকে সহজ করে তোলে, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করে এবং বিভিন্ন ডিভাইস থেকে নিরাপদভাবে অ্যাক্সেসের সুযোগ দেয়। ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আরও নিরাপদ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব হয়ে উঠবে।