ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া : তাৎপর্য, ফজিলত ও নিরাপত্তা লাভের শক্তিশালী আমল

mybdhelp.com-ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া
ছবি : MyBdhelp গ্রাফিক্স

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া প্রতিটি মুমিনের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত। সামান্য সময়ের জন্য হলেও যখন কোনো ব্যক্তি তার আবাসস্থল ত্যাগ করে, তখন আল্লাহর সুরক্ষা ও সাহায্য কামনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি আল্লাহর প্রতি বান্দার পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও নির্ভরতার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে বান্দা প্রতিটি পদক্ষেপের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তাঁর উপর ভরসা করে এবং এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে যে একমাত্র তাঁর সাহায্য ও ক্ষমতাতেই সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেলের মূল উদ্দেশ্য হলো এই দোয়ার ফজিলত, কখন ও কীভাবে এটি পাঠ করা উচিত এবং এর আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনের তাৎপর্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা, যাতে প্রতিটি মুমিন এই মূল্যবান আমলের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও কল্যাণ লাভ করতে পারে।

এই নিবন্ধে যা জানব

বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ – শব্দার্থ ও তাৎপর্য: বিশ্বাসের মূলভিত্তি

এই বরকতময় দোয়াটির প্রতিটি শব্দ গভীর অর্থ ও তাৎপর্যে পরিপূর্ণ, যা আমাদের ঈমানের ভিত্তি স্থাপন করে এবং আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। আসুন, এর প্রতিটি অংশের অর্থ মনোযোগের সাথে অনুধাবন করি:

  • বিসমিল্লাহ (بِسْمِ اللَّهِ): এই পবিত্র বাক্যটির অর্থ হলো “আল্লাহর নামে”। যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বে আল্লাহর নাম নেওয়া বরকত ও কল্যাণ লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যখন একজন মুমিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় “বিসমিল্লাহ” বলে, তখন সে প্রকারান্তরে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত কামনা করে এবং তাঁর নামেই যাত্রা শুরু করে।
  • তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ (تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ): এর অর্থ “আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম”। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এর অর্থ হলো বান্দা তার সাধ্যমতো চেষ্টা ও প্রচেষ্টা চালানোর পর ফলাফলের জন্য সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর নির্ভর করে। যখন একজন ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে “তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ”, তখন সে কার্যত জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন করে।
  • ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ (وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ): এই শক্তিশালী বাক্যটির অর্থ “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা ও শক্তি নেই”। এর মাধ্যমে বান্দা এই সত্যকে স্বীকার করে নেয় যে জগতের সকল ক্ষমতা ও শক্তির উৎস একমাত্র আল্লাহ। কোনো প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া বা কোনো কল্যাণ লাভ করা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। যখন একজন মুমিন এই বাক্য উচ্চারণ করে, তখন সে নিজের দুর্বলতা এবং আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করে।

কুরআনের আলোকে আল্লাহর উপর ভরসা ও নিরাপত্তার গুরুত্ব: ঐশী নির্দেশিকা

কুরআন মজিদে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করার গুরুত্ব এবং এর ফজিলত বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর উপর নির্ভর করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা তাঁর উপর ভরসা করে, তাদের জন্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

  • তাওয়াক্কুলের নির্দেশ: সূরা আত-তালাকের ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন।” এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে আল্লাহর উপর ভরসা করলে আল্লাহ বান্দার সকল প্রয়োজন পূরণ করেন।
  • ভরসাকারীদের জন্য আল্লাহর সাহায্য: সূরা আল-আনফালের ২ নম্বর আয়াতে মুমিনদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, “…এবং তারা তাদের রবের উপর ভরসা করে।” যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে, তারা আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ করে।
  • নিরাপত্তা ও আশ্রয় চাওয়া: কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বান্দাদের আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস বিশেষভাবে সকল প্রকার অনিষ্ট ও বিপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য নাজিল হয়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া পাঠের মাধ্যমে বান্দা প্রকারান্তরে আল্লাহর কাছেই নিরাপত্তা ও আশ্রয় কামনা করে।

কুরআনের এই আয়াতগুলো আল্লাহর উপর ভরসার গুরুত্ব এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে আমাদের সাহায্য করে।

হাদিসের আলোকে ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়ার ফজিলত: নববী পথের আলোকবর্তিকা

হাদিসের মূল্যবান গ্রন্থগুলোতে ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়ার বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এই দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করতেন।

  • শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা: তিরমিযী শরীফের ৩৪২৭ নম্বর হাদিসে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয় এবং বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তখন তাকে বলা হয়, ‘তোমার জন্য যথেষ্ট করা হয়েছে, তুমি রক্ষা পেয়েছ’ এবং শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়।” এই হাদিস স্পষ্টভাবে এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা লাভের কথা উল্লেখ করে।
  • বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তা: অন্যান্য হাদিসেও এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদে থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যখন বান্দা আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে এই দোয়া পাঠ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা অদৃশ্যভাবে তাকে অনেক অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন।
  • আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ: এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভের যোগ্য হয়। আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি বান্দার জন্য যথেষ্ট হন এবং তার সকল প্রয়োজন পূরণ করেন।

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া – কখন পাঠ করতে হয়: সময়ের গুরুত্ব

এই দোয়া পাঠ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, তবে এর সর্বোত্তম সময় হলো যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘর বা আবাসস্থল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দরজার কাছে পৌঁছে। এই বিশেষ মুহূর্তে আন্তরিকভাবে এই দোয়া পাঠ করা সুন্নত এবং এর ফজিলতও অনেক বেশি।

  • ঘর থেকে বের হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে: যখন আপনি ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হন এবং দরজার দিকে অগ্রসর হন, তখন মনে একাগ্রতা এনে এই দোয়া পাঠ করুন।
  • যেকোনো প্রয়োজনে বের হওয়ার সময়: সামান্য সময়ের জন্য হলেও যদি আপনি ঘর থেকে বের হন, তবে এই দোয়া পাঠ করা উচিত।
  • দীর্ঘ যাত্রা বা সফরের শুরুতে: দীর্ঘ যাত্রা বা সফরের শুরুতে এই দোয়া পাঠ করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার কাছে পথের নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করা হয়।
  • অন্যান্য সময়ের গুরুত্ব: শুধু বের হওয়ার সময়ই নয়, যেকোনো মুহূর্তে আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর উপর ভরসা করা উত্তম। তবে, ঘর থেকে বের হওয়ার প্রাক্কালে এই দোয়ার তাৎপর্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া – কীভাবে পাঠ করতে হয়: আন্তরিক মিনতির পদ্ধতি

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া কেবল মুখস্ত করে রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং এর পূর্ণাঙ্গ উপকারিতা লাভ করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও আদব মেনে চলা আবশ্যক। এই নিয়মগুলো একদিকে যেমন দোয়ার মর্যাদা বৃদ্ধি করে, তেমনি বান্দার আধ্যাত্মিক উন্নতিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

  • দোয়া পাঠের শিষ্টাচার ও পদ্ধতি: যেকোনো প্রার্থনার কিছু সাধারণ নিয়মকানুন রয়েছে, যা এই দোয়ার ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা উচিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন অবস্থায় দোয়া করা। যদি সম্ভব হয়, তবে অজু করে নেওয়া ভালো, কারণ এটি মন ও শরীরকে শান্ত করে এবং দোয়ায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সহায়ক।
  • আন্তরিকতা, একাগ্রতা ও মনোযোগ: দোয়া কবুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো আন্তরিকতা। হৃদয় থেকে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং দোয়ার অর্থের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। দুনিয়াবী খেয়ালখামিকে মন থেকে দূরে রেখে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
  • আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা: দোয়া করার সময় বান্দার মনে এই দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিত যে আল্লাহ তার দোয়া অবশ্যই শুনবেন এবং তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। কোনো প্রকার সন্দেহ বা দ্বিধা রাখা উচিত নয়। আল্লাহর অসীম করুণা ও ক্ষমার উপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন করা জরুরি।
  • ধীরস্থির ও স্পষ্ট উচ্চারণ: তাড়াহুড়ো করে দোয়া পাঠ করা উচিত নয়। প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে উচ্চারণ করা উচিত, যাতে দোয়ার অর্থ ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম হয়।
  • উত্তম পোশাক ও পরিবেশ (সম্ভব হলে): যদিও যেকোনো অবস্থায় দোয়া করা যায়, তবে উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দোয়া করলে মনে প্রশান্তি আসে এবং মনোযোগ বাড়ে।

আল্লাহর উপর ভরসার তাৎপর্য ও গুরুত্ব: ঈমানের মূল ভিত্তি

আল্লাহর উপর ভরসা (তাওয়াক্কুল) একজন মুমিনের ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি কেবল একটি মৌখিক স্বীকৃতি নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি আন্তরিক নির্ভরতা ও আত্মসমর্পণের নাম।

  • ঈমানের অপরিহার্য অংশ: আল্লাহর উপর ভরসা করা ঈমানের পূর্ণতার লক্ষণ। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর যত বেশি ভরসা করে, তার ঈমান তত মজবুত হয়।
  • মানসিক প্রশান্তি ও স্থিরতা: আল্লাহর উপর ভরসা করলে বান্দা মানসিক শান্তি ও স্থিরতা লাভ করে। জীবনের উত্থান-পতনে সে হতাশ বা বিচলিত হয় না, বরং আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকে।
  • সাহস ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: আল্লাহর উপর ভরসা বান্দাকে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে সে আল্লাহর সাহায্যের উপর নির্ভর করে নির্ভয়ে মোকাবিলা করতে পারে।
  • আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ: যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন এবং তাদের জন্য যথেষ্ট হন।
  • কর্মোদ্যোগের প্রেরণা: আল্লাহর উপর ভরসা কর্মবিমুখতা নয়, বরং এটি বান্দাকে তার সাধ্যমতো চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে এবং ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করতে শেখায়।

নিরাপত্তা ও সুরক্ষা লাভের জন্য অন্যান্য দোয়া ও আমল: আত্মরক্ষার ঐশী পন্থা

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা লাভের জন্য ইসলামে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমলের কথা বলা হয়েছে। এগুলো নিয়মিত পাঠ ও অনুশীলনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা লাভ করা যায়।

  • সকাল ও সন্ধ্যার যিকর: প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় পঠিতব্য বিভিন্ন যিকর ও দোয়া (যেমন: আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস) বান্দাকে সকল প্রকার অনিষ্ট ও বিপদ থেকে রক্ষা করে।
  • আয়াতুল কুরসি পাঠ: ফজরের নামাজ এবং প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এটি পাঠকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সুরক্ষা বর্ষিত হয়।
  • সূরা ফালাক ও সূরা নাস: এই দুটি সূরাকে ‘মু’আওবিযাতাইন’ বলা হয়। এগুলো জাদু, বদনজর এবং অন্যান্য সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • বিপদ-আপদের দোয়া: বিভিন্ন প্রকার বিপদ ও কষ্টের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। সেগুলো পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য ও সুরক্ষা কামনা করা যায়।
  • দান ও সদকা: দান-সদকা বিপদ-আপদ দূর করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। নিয়মিত দান করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং অনেক বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়ার সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব: শান্তির পরশ

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আল্লাহর উপর ভরসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনেও সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

  • ব্যক্তিগত জীবনে মানসিক শান্তি: নিয়মিত এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের এক অনাবিল শান্তি অনুভব করে। বিপদ-আপদের ভয় কমে যায় এবং মনে সাহস ও স্থিরতা আসে।
  • আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি: এই দোয়া বান্দাকে আল্লাহর উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে শেখায়। সে বুঝতে পারে যে একমাত্র আল্লাহই সকল প্রকার সুরক্ষা ও কল্যাণের উৎস।
  • সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: যখন একজন ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে ঘর থেকে বের হয় এবং নিরাপদে ফিরে আসে, তখন সমাজে আল্লাহর ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস বাড়ে এবং মানুষ একে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা করতে উৎসাহিত হয়।
  • নিয়মিত আমলের গুরুত্ব: এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করার মাধ্যমে অন্যান্য সুন্নত আমলের প্রতিও আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং ব্যক্তি একটি নিয়মতান্ত্রিক ইবাদতের জীবনে অভ্যস্ত হয়।
  • আল্লাহর স্মরণে থাকা: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে বান্দা সর্বদা আল্লাহর স্মরণে থাকে, যা তাকে অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে।

প্রশ্নোত্তর (FAQ): ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া

  • প্রশ্ন: ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়াটি কি?
    • উত্তর: দোয়াটি হলো: “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”
  • প্রশ্ন: এই দোয়া পাঠের ফজিলত কী?
    • উত্তর: এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা, বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তা এবং আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ করা যায়।
  • প্রশ্ন: কখন এই দোয়া পাঠ করা উচিত?
    • উত্তর: ঘর থেকে বের হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এই দোয়া পাঠ করা সুন্নত। যেকোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এটি পড়া উচিত।
  • প্রশ্ন: আল্লাহর উপর ভরসা করার অর্থ কী?
    • উত্তর: আল্লাহর উপর ভরসা করার অর্থ হলো নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা ও প্রচেষ্টা চালানোর পর ফলাফলের জন্য সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর নির্ভর করা।
  • প্রশ্ন: নিরাপত্তা লাভের জন্য আর কী কী দোয়া পড়া যায়?
    • উত্তর: সকাল ও সন্ধ্যার যিকর, আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস এবং বিপদ-আপদের অন্যান্য দোয়া পাঠের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা যায়।

উপসংহার:

পরিশেষে বলা যায়, ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং নিরাপত্তা ও কল্যাণ লাভের শক্তিশালী আমল। এই দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা স্থাপন করে এবং তাঁর কাছে সুরক্ষা কামনা করে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা এই দোয়ার তাৎপর্য, ফজিলত এবং কখন ও কীভাবে এটি পাঠ করা উচিত তা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছি। আমাদের উচিত এই মূল্যবান আমলটিকে দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা লাভ করা।

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া: যদি এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে নিচে মন্তব্য করুন। পোস্টটি যদি তথ্যবহুল মনে হয়, তবে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top